মাদক উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে সবার প্রথমেই আছে আফগানিস্তান, মরক্কো, কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং মিয়ানমার, লাওস আর থাইল্যান্ড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয়।
Advertisement
এছাড়াও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হয় আফগানিস্তানে। যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়া হচ্ছে আফগানিস্তানের আফিমের মূল ক্রেতা। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে তৈরি হয় মেথাম্ফেটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ হলো এক ধরনের মাদক। উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় হাজার টন মারিজুয়ানা ও হাশিশ উৎপাদিত হয়। কোকেন উৎপাদনে বিশ্বে সেরা হচ্ছে কলম্বিয়া।
এই দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই মাদক উৎপাদন এবং সেবন হয়। তরুণ সমাজের মধ্যে মাদক সেবনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যা পরিবার, সমাজ, জাতি দেশ সবার জন্যই সমান ক্ষতিকর। এজন্য মাদক নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন রয়েছে। বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ অনুযায়ী ৫ গ্রাম পর্যন্ত কোকেন, হেরোইন, মরফিন ও পেথিড্রিন পাওয়া গেলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে।
এছাড়া মাদকের পরিমাণ ৫ থেকে ২৫ গ্রামের মধ্যে হলে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা এবং মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।দেশে অনুমতি ছাড়া কেউ অ্যালকোহল পান করতে পারবেন না।
Advertisement
চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন বা সরকারি মেডিকেল কলেজের কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পানের অনুমতি দেওয়া হয় না। তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তাড়ি ও পঁচুই এবং পার্বত্য জেলা বা অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি করা মদ পান করার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য নয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক মাদক আইনে কোন দেশে কী শাস্তি আছে-
সৌদি আরবসৌদি আরবে মাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যুদণ্ড প্রায় নিশ্চিত। মাদক সেবন কিংবা সেগুলো রাখার জন্য দেশটিতে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত, জরিমানা ও দীর্ঘদিনের কারাবাস দেওয়া হয়।
ইরানপ্রতিবেশী আফগানিস্তানে আফিমের চাষ হওয়ায় ইরানের অন্যতম সমস্যা মাদক। দেশটিতে মাদকসহ ধরা পড়লে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। হতে পারে মৃত্যুদণ্ডও।
Advertisement
মালয়েশিয়ামাদক বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়লে মালয়েশিয়ায় মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। দেশটিতে মাদক রাখার জন্য জেল, জরিমানার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া অভিবাসীদের কাছে মাদক পাওয়া গেলে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
থাইল্যান্ডথাইল্যান্ডে মাদক পাচারের কারণে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। মাদকসেবীদের বাধ্যতামূলকভাবে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো সে দেশের নিয়মিত ঘটনা।
ইন্দোনেশিয়াইন্দোনেশিয়ায় গাঁজাসহ ধরা পড়লে সর্বোচ্চ ২০ বছরের জেল হতে পারে। অন্যান্য মাদকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে। তবে মাদক বিক্রির দায়ে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।
ফিলিপাইনফিলিপাইনে মাদক পাচারকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কারো কাছে ১০ গ্রামের বেশি মাদক পাওয়া গেলে তাকে পাচারকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
চীন ও সিঙ্গাপুরচীনে মাদকসহ ধরা পড়লে সরকারের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যেতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া মাদক সংক্রান্ত কিছু অপরাধের জন্য ফাঁসি দেওয়া হয় দেশটিতে। অন্যদিকে মাদক বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে।
ভিয়েতনাম০.৫৯ কেজি হেরোইনসহ ধরা পড়লে নিশ্চিত ফাঁসি।
কম্বোডিয়ামাদক রাখার দায়ে এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে৷ তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মতো কম্বোডিয়ায় মাদক পাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই।
লাওসমাদকসহ ধরা পড়লে প্রায় ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আর চেতনানাশক ওষুধসহ ধরা পড়লে ১০ বা তার বেশি সময়ের জেল হতে পারে।
তুরস্কমাদক রাখার জন্য বড় অংকের জরিমানা ও দীর্ঘ কারাবাসের বিধান রয়েছে। মাদক বিক্রির অপরাধের শাস্তি আরও কঠোর হতে পারে।
কেএসকে/এএসএম