ফিচার

স্বপ্নজয়ী মা নার্গিস সুলতানা

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে ১২ জন ‘স্বপ্নজয়ী মা’কে বিশেষ সম্মাননা দিয়েছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এর মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নার্গিস সুলতানা অন্যতম। তিনি গুরুদাসপুর কামারপাড়া মহল্লার মৃত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী। স্বপ্নজয়ী মা নার্গিস সুলতানা বিদেশে থাকায় তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার ছেলে ব্যাংকার ও লেখক ফাত্তাহ তানভীর রানা।

Advertisement

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। আরও উপস্থিত ছিলেন সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বাংলাদেশ শিশু একাডমির মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন প্রমুখ।

স্বপ্নজয়ী এ মায়ের জন্ম ১৯৫৮ সালে। দশম শ্রেণিতেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকের সাথে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় নার্গিস সুলতানার উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, নিজে না পারলেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। তার এ প্রতিজ্ঞা পূরণের যাত্রা ছিল অত্যন্ত সংগ্রামময়। তিনি হাল ছাড়েননি। স্বপ্নকে সার্থক করেছেন। নারী হয়ে কৃষিনির্ভর সাংসারিক কাজ-কর্ম পরিচালনা, দর্জির কাজ করা ও সন্তান মানুষ করা ছিল অত্যন্ত কষ্টের। তিনি নানা সামাজিক চাপ, সমস্যা ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম করে তিন সন্তানকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তার বড় মেয়ে জান্নাতুন ফেরদৌস লীনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে সম্মান ও এমএ সম্পন্ন করে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। ছোট মেয়ে ডা. নাদিরা পারভীন রুনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২৪তম বিসিএসে (স্বাস্থ্য ক্যাডার) উত্তীর্ণ হন। ২০০৮ সালে স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। ছেলে ফাত্তাহ তানভীর মো. ফয়সাল রানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকা উত্তর অঞ্চল কার্যালয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

Advertisement

নার্গিস সুলতানার স্বামী বিয়োগ ঘটে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। এরপর সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে অপ্রাপ্ত বয়স্ক তিন সন্তানকে বড় করে তুলেছেন। সম্বল ছিল শুধু ছোট একটি ভাঙা আধপাকা বাড়ি আর অল্প কিছু জমি। সংগ্রাম শুরু হয় সেই ছোট বাড়িটি ভাড়া দেওয়া আর জমিজমা দেখাশোনার মাধ্যমে। তিনি প্রাইভেট পড়িয়েছেন প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী। তিনি নিজের ও মানুষের কাপড় তৈরির কাজও করেছেন, তবে স্বল্প পরিসরে। কোনো দোকান ছিল না তার। কারো কারো অর্ডারের কাজ বাড়িতে বসেই করতেন। এরপর দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এত স্মৃতি আর এত অর্জন।

তিন সন্তানকে শুধু সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে লেখাপড়া করিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। কর্মক্ষেত্রেও সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাহস জুগিয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন সুপাত্রে। আজ এ মায়ের তিন সন্তানই সুপ্রতিষ্ঠিত। ছোট সেই আধপাকা বাড়ির পাশে আজ দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ পাকা একটি দোতলা বাড়ি।

নার্গিস সুলতানা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ‘জয়িতা অন্বেষণ কার্যক্রম’র আওতায় ২০১৭ সালে রাজশাহী বিভাগের সফল জননী ক্যাটাগরিতে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া একই কার্যক্রমের আওতায়ও ২০১৬ সালে গুরুদাসপুর উপজেলা এবং নাটোর জেলার ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ মনোনীত হয়েছিলেন। নার্গিস সুলতানা ২০১৫ সালে গার্ল গাইডস নাটোর আয়োজিত ‘সফল জননী’ পুরস্কার লাভ করেন। ২০২০ সালে ‘র্যাপিড পিআর রত্নগর্ভা মা’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

এসইউ/এএসএম

Advertisement