ধর্ম

মানুষের আকৃতিতে কেন ফেরেশতা আগমন করেছিল?

মানুষের আকৃতিতে কেন ফেরেশতা আগমন করেছিল?

অবাধ্যতার শাস্তি কেমন; গুনাহের শাস্তির ধরন কেমন; আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে জানিয়েছেন। আবার সেই ঘটনা কোরআনে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকেও জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেশতাদের মানুষের আকৃতিতে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিল তা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কাছে কথোপকথনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। যা কোরআনের বর্ণনায়ও ওঠে আসে। কেন তিনি ফেরেশতাদের মানুষের আকৃতিতে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন?

Advertisement

আল্লাহ তাআলার মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা পাঠানোর সে ঘটনা ও কথোপকথনের বিষয়টি আজকের ২৪ তারাবিতে হাফেজে কোরআনগণ পড়বেন-

قَالَ فَمَا خَطۡبُکُمۡ اَیُّهَا الۡمُرۡسَلُوۡنَ

'ইবরাহিম বললেন, হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ! তোমাদের বিশেষ কাজ কি?' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩১)

Advertisement

২৪ তারাবিতে সুরা যারিয়াতের ৩১ আয়াত থেকে শুরু হবে। সুরাটিসহ সুরা তুর, নজম, ক্বামার, আর-রাহমান, ওয়াক্বিয়া ও সুরা হাদিদসহ পড়া হবে মোট ৭টি সুরা। বিষয় বস্তু, চিন্তা-গবেষণা ও আমলের দিক থেকে প্রত্যেকটি সুরাই গুরুত্বপূর্ণ। সে সঙ্গে ২৭তম পাড়ার তেলাওয়াত শেষ হবে। এসব সুরায় মানুষের জন্য তৈরি করা মহান রবের অসংখ্য নেয়ামতরাজির বর্ণনাসহ অনেক সতর্কবার্তাও তেলাওয়াত হবে হাফেজে কুরআনদের কণ্ঠে। সংক্ষেপে সুরাগুলোর আলোচ্য বিষয় তুলে ধরা হলো-

সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩১-৬০

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। একত্ববাদ, নবুয়ত ও হাশরের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে সুরাটিতে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত এবং হাশরের ময়দানের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরায় মানবজাতিকে আল্লাহ তাআলা শুধু ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন সে ঘোষণাও রয়েছে। আজকের তারাবির প্রথম রাকাতে সুরা যারিয়াত থেকে পড়া হবে। প্রথম দিকেই ওঠে আসবে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা আগমনের কারণ-

 قَالَ فَمَا خَطۡبُکُمۡ اَیُّهَا الۡمُرۡسَلُوۡنَ

Advertisement

ইবরাহিম বললেন, হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ! তোমাদের বিশেষ কাজ কি?

আয়াতের এই কথোপকথনের মধ্যে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম জানতে পারলেন যে, আগন্তুক মেহমানগণ আল্লাহর ফেরেশতা। আর মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতাদের আগমন যেহেতু কোনো বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য হয়ে থাকে। তাই তাদের আগমনের উদ্দেশ্য জানার জন্য ইবরাহিম আলাইহিস সালাম خطب শব্দ ব্যবহার করেছেন।

আরবি ভাষায় خطب শব্দটি কোনো সাধারণ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় না, বরং কোনো বড় গুরুত্বপূর্ণ কাজ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি অভিযানে আগমন করেছেন? উত্তরে তারা লুত আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের ওপর মাটির তৈরি প্রস্তর (কংকর) নিক্ষেপের আজাব নাজিল করার কথা বললেন।' (কুরতুবি)

কোরআনুল কারিমে তাদের কথোপকথন এভাবে ওঠে এসেছে-

قَالُوۡۤا اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰی قَوۡمٍ مُّجۡرِمِیۡنَ

'তারা (ফেরেশতারা) বলল, নিশ্চয়ই আমরা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩২)

আয়াতে অপরাধী সম্প্রদায় বলতে হজরত লুত আলাইহিস সালামের সেই সম্প্রদায়কে বোঝানো হয়েছে; যাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল সমলিঙ্গী ব্যভিচার তথা সমকামী (পুরুষের পায়ুমৈথুন)।

لِنُرۡسِلَ عَلَیۡهِمۡ حِجَارَۃً مِّنۡ طِیۡنٍ

যাতে আমরা তাদের উপর মাটির শক্ত ঢেলা নিক্ষেপ করি।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩৩)

এখানে নিক্ষেপ করার অর্থ হলো সেই নিক্ষেপিত কাঁকর দিয়ে তাদেরকে হত্যা করা। এই কাঁকরগুলো না ছিল খাঁটি পাথরের, আর না ছিল শিলাবৃষ্টি। বরং এগুলি ছিল পোড়া মাটির তৈরি।' (আহসানুল বায়ান)

 مُّسَوَّمَۃً عِنۡدَ رَبِّکَ لِلۡمُسۡرِفِیۡنَ

'যা আপনার রবের কাছ থেকে সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য চিহ্নিত।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩৩)

ফেরেশতারা বলল, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ চিহ্নযুক্ত ছিল অথবা প্রত্যেক কংকরের গায়ে সেই ব্যক্তির নাম লিখিত ছিল, যাকে ধ্বংস করার জন্যে কংকরটি প্রেরিত হয়েছিল। সে যেদিকে পলায়ন করেছে, কংকরও তার পশ্চাদ্ধাবন করেছে।' (কুরতুবি)

আর আল্লাহ তাআলা মুমিনদের রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা যাদেরকে আজাব থেকে হেফাজত করেছিলেন। সেই সময় সেখানে যারা মুমিন ছিলেন, তাদের ব্যাপারেও মহান আল্লাহ সুস্পষ্ট কথা এভাবে তুলে ধরেছেন-

فَاَخۡرَجۡنَا مَنۡ کَانَ فِیۡهَا مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

'সেখানে যারা বিশ্বাসী ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩৫)

আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতার মাধ্যমে আজাব আসার আগে মুমিন বান্দাদের সে অঞ্চল থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাতে তারা আজাব থেকে বেঁচে যায়।

আল্লাহর নির্দেশের পরও সেখানে একজন মুমিন মুসলমানের ঘর ছিল। সে ব্যাপারেও কোরআনের এ সুরায় ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَمَا وَجَدۡنَا فِیۡهَا غَیۡرَ بَیۡتٍ مِّنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

'আর সেখানে একটি (লুতের) ঘর ছাড়া কোনো আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) আমি পাইনি।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৩৬)

অত্যাচারী সম্প্রাদায়ের মধ্যে এই ঘরটি ছিল আল্লাহর নবি হজরত লুত আলাইহিস সালামের ঘর। যেখানে তাঁর দুই কন্যা এবং তাঁর উপর ঈমান আনয়নকারী কিছু লোক ছিল। বলা হয় যে, এরা মোট তের জন ছিল। এদের মধ্যে হজরত লুত আলাইহিস সালামের স্ত্রী শামিল ছিল না। বরং সে তার ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। (আয়সারুত তাফাসির)

ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা ও মেনে নেওয়া। আল্লাহর নির্দেশাবলীর সামনে আনুগত্যের মাথা নতকারীকে মুসলিম বলা হয়। এই দিক দিয়ে প্রত্যেক মুমিনই মুসলিম। তাই প্রথমে তাদের জন্যে মুমিন শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং পরে আবার তাদেরই জন্য মুসলিম শব্দ ব্যবহার করা হয়।

মানুষ সৃষ্টির রহস্য

এ সুরায় আল্লাহ মুসা, আদ, সামুদসহ আরো অনেক নবির ব্যাপারে বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ফেরাউনের অবাধ্যতার কথাও বাদ যায়নি। এরপর মহান আল্লাহ মানুষকে চরম সত্য কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি মানুষ ও জিনকে শুধু তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)

এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বিধি-বিধানগত ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। যা তিনি ভালবাসেন ও চান। আর তাহলো, সব মানুষ ও জ্বিন কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আনুগত্যও শুধু তাঁরই করবে। এর সম্পর্ক যদি তাঁর সৃষ্টিগত ইচ্ছার সঙ্গে হতো, তবে কোনো মানুষ ও জ্বিন আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখতা অবলম্বন করার কোনো ক্ষমতাই রাখতো না। অর্থাৎ এই আয়াতে সব মানুষ ও জ্বিনকে জীবনের সেই উদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করানো হয়েছে, যেটাকে তারা ভুলে গেলে পরকালে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এই পরীক্ষায় তারা সফল না হলে, যাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন।' (আহসানুল বায়ান)

আল্লাহ তাআলা মানুষের কাছে জীবিকা চান না। চান শুধু ইবাদত-বন্দেগি ও আনুগত্য। এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে। আবার যারাই আল্লাহর হুকুম পালন তথা অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের কঠিন পরিণতির কথা বর্ণনায় শেষ হবে সুরা যারিয়াত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَا أُرِيدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَن يُطْعِمُونِ - إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ

‘আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। আল্লাহ তাআলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৭-৫৮)

فَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذَنُوبًا مِّثْلَ ذَنُوبِ أَصْحَابِهِمْ فَلَا يَسْتَعْجِلُونِ - فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِن يَوْمِهِمُ الَّذِي يُوعَدُونَ

‘অতএব, এই জালেমদের প্রাপ্য তাই, যা ওদের অতীত সহচরদের প্রাপ্য ছিল। কাজেই ওরা যেন আমার কাছে তা তাড়াতাড়ি না চায়। অতএব, কাফেরদের জন্যে দুর্ভোগ সেই দিনের, যেদিনের প্রতিশ্রুতি ওদেরকে দেয়া হয়েছে।’ (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৬০)

সুরা তুর : আয়াত ০১-৪৯

সুরা তুর মক্কা অবতীর্ণ হয়। এ সরায় তিনটি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। আর তাহলো-

১. পরকালীন জীবনের সত্যতার বর্ণনা।

২. সত্যদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে কঠের সতর্কবাণী ও হুশিয়ারি।

৩. পরকালীন জীবনে সত্য-সাধকদের জন্যে পুরস্কারের শুভ সংবাদ।

এছাড়াও মুমিনের ঈমানের মজবুতির জন্য তাওহিদ, রেসালাত এবং কেয়ামাতের ভয়াবহতার আলোচনা রয়েছে এ সুরায়।

সুরা নজম : আয়াত ০১-৬২

সুরা নজম মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রেসালাতের প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি কথাই যে মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়, সে ঘোষণাও এসেছে এ সুরায়। বিশেষ করে বিশ্বনবির পবিত্র জবান থেকে যা বের হয় তা শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ অহি; সে কথাও বলা হয়েছে।

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্য নবি হওয়া এবং তাঁর প্রতি অবতীর্ণ ওহিতে সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ না থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। অতপর মুশরিকদের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

সুরা কামার : আয়াত ০১-৫৫

এ সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বিশেষ মুজেজার উল্লেখ রয়েছে। যা বিশ্বনবির নবুয়তের সত্যতার মহা দলিল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়াও সুরা কামারের অন্যতম আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

১. কেয়ামাত কাছাকাছি হওয়ার ঘোষণা।

২. তাওহিদ এবং রেসালাতের দলিল প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. ঈমান এবং নেক আমলের জন্য পুরস্কারের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানির শাস্তি সম্পর্কেও সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।

সুরা আর-রাহমান : আয়াত ০১-৭৮

মাদিনায় অবতীর্ণ শ্রুতিমধূর ও ব্যাপক পরিচিত ও তেলাওয়াতকৃত একটি সুরা আর রহমানে দুনিয়া ও আখিরাতের আল্লাহর অনন্ত অসীম নিয়ামাতের বর্ণনা করা হয়েছে। এ সুরার মূল বক্তব্য হলো-

১. বিশ্বলোকের গোটা ব্যবস্থাপনা এক আল্লাহর ছাড়া আর কারো কতৃত্ব নেই;

২. গোটা বিশ্বলোকের ব্যবস্থাপনা পূর্ণ ভারসাম্যের সঙ্গে ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোনোভাবে এ ভারসাম্য বিনষ্ট হবে না;

৩. আল্লাহ তাআলার কুদরত ও বিস্ময়কর কার্যকলাপের কথা বলার সঙ্গে মানব-দানবরা আল্লাহর যে নিয়ামাত ভোগ করছে, তার দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে;

৪. মানুষ ও জিন জাতিকে তার কর্মের হিসাবের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। এ সুরায় পৃথিবীর নাফরমান মানুষ ও জিনের মর্মান্তিক পরিণতির কথা বলা উল্লেখ করা হয়েছে।

৫. মানব ও দানবদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে, পরকালকে ভয় করেছে, তাদেরকে প্রদেয় নিয়ামাতের বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হয়েছে এ সুরায়।

সুরা ওয়াকেয়া : আয়াত ০১-৯৬

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। আল্লাহ তাআলার অনন্ত অসীম শক্তি ও অপূর্ব মহিমার বিস্তারিত বিবরণ স্থান পেয়েছে সুরাটিতে। বিশেষ করে পরকালে মানুষের সমগ্র জীবনের কর্মকাণ্ডের পরিণতি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। জন্মের ন্যয় মৃত্যু যেমন সত্য, ঠিক মৃত্যুর ন্যয় পরকাল, হাশরের ময়দানে পুনরুত্থান হিসাব-নিকাশ, নেক-গুনাহ, জান্নাত-জাহান্নাম সবই সত্য। যার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে এ সুরায়। সর্বোপরি এ সুরার শেষে আখেরাতের আলোচনা বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা হাদিদ : আয়াত ০১-২৯

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা হাদিদে ইসলামি শরিয়তের বুনিয়াদি বিধি-নিষেধ এবং মৌলিক আক্বিদা তথা তাওহিদ সম্পর্কে হিদায়াত রয়েছে এবং উত্তম চরিত্র অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ সুরার মূল বক্তব্য হলো-

১. বিশ্বজগৎ এক আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি ভূ-মণ্ডল ও নভোমণ্ডল সব কিছুর একচ্ছত্র অধিপতি। সবকিছুই তার কর্তৃত্বাধীন। তাঁর কর্তৃত্বের কোনো কিছুতেই শরিক নেই।

২. সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য; আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম করার জন্য মানুষের কর্তব্য হলো- আত্মত্যাগের পরিচয় দেয়া।

৩. দুনিয়ার ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী বিষয়। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনকে পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের সম্বল সংগ্রহে ব্যয় করাই কল্যাণকামী মানুষের কর্তব্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম