কোরআন-সুন্নাহে তাকওয়া অর্জনের অনেক উপায় বর্ণনা করা হয়েছে; তন্মধ্যে কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো—
Advertisement
আল্লাহতায়ালার যথাযথ পরিচয় লাভ করাকোনো মুসলমান যদি পবিত্র কোরআনকে ভালোভাবে বুঝতে পারে, তাহলে পবিত্র কোরআন তার অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এ কোরআনে মানুষের জন্য সব দৃষ্টান্তই বর্ণনা করেছি। যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে বক্রতামুক্ত আরবি কোরআন। যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা যুমার : ২৭-২৮)।
আল্লাহতায়ালা যদি কোরআন নাজিল না করতেন, তাহলে আমরা জানতে পারতাম না, কিভাবে আমরা তাকওয়া অবলম্বন করব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সিয়ামের বিধিবিধান বর্ণনা করার পর বলেন, ‘এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৭)। সুতরাং আল্লাহ যদি বর্ণনা না করতেন, তাহলে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা সম্ভব হতো না।
আল্লাহতায়ালার পরিচয় লাভ করার অনন্য এক মাধ্যম হলো, পবিত্র কোরআন। কোনো মানুষ যখন পবিত্র কোরআন নিয়ে অভিনিবেশসহ চিন্তা করে, তখন আল্লাহতায়ালা তাঁর শান-শওকত, মহত্ব, গুণবাচক নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে তার সামনে প্রকাশ হন। ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ.) বলেন, ‘কোরআন আল্লাহর কালাম। আর আল্লাহ তাতে তার গুণাবলির মাধ্যমে বান্দার সামনে আবির্ভাব হন।’ (ফাওয়াইদ : ৮০)।
Advertisement
ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করাআল্লাহতায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়, চাই সেটা ফরজ ইবাদত হোক কিংবা নফল। এরশাদ হচ্ছে, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো। যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের আগে যারা ছিল, তাদেরকে। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। (সুরা বাকারা : ২১)।
যেসব ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়, তন্মধ্যে একটি হলো ‘সিয়াম’। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের আদেশ করেছেন।’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায় কথন (গিবত, মিথ্যা, গালিগালাজ, তোহমত, লানত ইত্যাদি)-ও তৎবিষয়ে আমল পরিত্যাগ না করে, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৮৯)। সুতরাং যদি তাকওয়া অর্জন না হয়, তাহলে সিয়ামের উদ্দেশ্য আদায় হবে না। ফলে সিয়ামের সওয়াব কম হবে। (আল ফাতওয়া আল মিসরিয়্যা : ২৮৯]
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করাআল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাত ও দিবসের বিবর্তন এবং আসমানসমূহ ও জমিনে যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস : ৬)।
Advertisement
পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত আয়াত ও হাদিস পাঠ করাকবর ও তার শাস্তি এবং পরকাল ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কৃত কোরআনের আয়াত ও হাদিসগুলো বেশি বেশি অধ্যয়ন করার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের জন্য তাদের ওপর দিকে থাকবে আগুনের আচ্ছাদন। আর তাদের নিচের দিকেও থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। এর দ্বারা আল্লাহ তার বান্দাদের ভয় দেখান। আেমার বান্দারা! তোমরা আমাকে ভয় করো।’ (সুরা যুমার : ১৬)।
মুনশি/এসইউ/এমএস