ভোলার চরাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকামের চাষ। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ক্ষেতে সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করতে হয়েছে। যার ফলে কম খরচে অধিক ফলন পেয়েছেন চাষিরা। এ কারণেই চলতি বছর ভোলার চরাঞ্চলে ক্যাপসিকাম চাষের বিপ্লব ঘটেছে।
Advertisement
সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবছরও ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মাঝের চর ও দৌলতখান উপজেলার মদনপুর চরে চাষ হয়েছে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম। তবে এবার নতুন করে মনপুরায় উপজেলায়ও হয়েছে ক্যাপসিকামের চাষ। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতে রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ছিল কম। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর খুব কম খরচে অধিক ফলন পেয়েছেন চাষিরা। আর ঢাকার পাইকারি বাজারের ক্যাপসিকামের দাম চড়া থাকায় লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
মদনপুর চরের ক্যাপসিকাম চাষি মো. সিরাজ ও ইয়াকুব আলী জানান, তারা ৪৮ শতাংশ জমিতে এবছর ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। এতে তাদের বীজ, সার ঔষধ ও জমির খরচ মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এবছর তারা ২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম ঢাকার পাইকারি বাজারের বিক্রি করেছেন। ক্ষেতে এখনও অনেক ক্যাপসিকাম রয়েছে। তারা আশা করছেন এখন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
তারা আরো জানান, এবছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ক্ষেতে রোগ, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম ছিল। তাই ক্ষেতে তাদের খরচও কম হয়েছে। এছাড়াও এবছর ক্ষেতে ক্যাপসিকামও ভালো হয়েছে। ওই চরের কৃষক শেখ ফরিদের স্ত্রী কামরুল নাহার জানান, এবছরের মতো গত বছর ক্যাপসিকাম এতো ভালো ফলেনি। এবং পাইকারি বাজারেও দাম কম ছিল। কিন্তু চলতি বছর ক্ষেতে যেমন ক্যাপসিকাম ভালো হয়েছে তেমনি এখন পর্যন্ত ঢাকার পাইকারি বাজারের কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দাম রয়েছে। আমরা আশা করছি এবছর ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক লাভবান হব।
Advertisement
মাঝের চরের কৃষক মো. সালাউদ্দিন জানান, ক্যাপসিকাম একটি লাভজনক ফসল। গত বছর আমাদের এই চরে কৃষকরা ক্যাপসিকাম চাষ করে তেমন লাভ করতে পারেনি। কিন্তু এবছর আমাদের চরের সব কৃষক ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। চরের সব কৃষক এবার অনেক খুশি।
ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম নকীব জানান, মাঝের চরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করা কৃষকদের আমরা আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ করার পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়ও তাদের চাষ করার জন্য জমিরও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যার ফলে ওইসব কৃষকরা মাঝের চরে ক্যাপসিকাম চাষ করে এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভোলার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ঊর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গাজী নাজমুল হাসান জানান, ভোলার মাঝের চর, দৌলতখানের মদনপুর চর ও মনপুরা উপজেলার চরে কৃষকরা বর্তমানে হাইব্রিড জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। এতে কৃষকদের যেমন বেশি দামে বীজ ক্রয় করতে হয়, তেমনি ক্ষেতে সার ও কীটনাশকের পরিমাণও বেশি প্রায়োজন হয়।
তাই আমরা কৃষকদের খরচ কমিয়ে এনে কৃষকদের ক্যাপসিকাম চাষে অধিক লাভবান করার লক্ষ্যে চেষ্টা করছি। এবছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভোলার সরেজমিন গবেষণা বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে বারি-১ ও ২ চাষ করে সফলতা পেয়েছে। আমরা আশা করছি আগামীতে চাষিরা বারি-১ ও ২ ক্যাপসিকাম চাষ করলে অধিক পরিমাণ লাভবান হবেন।
Advertisement
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর জানান, দিন দিন ভোলা জেলায় ক্যাপসিকাম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা কৃষকদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিচ্ছি। এবং ক্যাপসিকাম চাষে তাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, প্রায় ১০ বছর আগে ভোলার বিচ্ছিন্ন মাঝের চরে প্রথমবারে মতো ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন মনির পাঠান নামে একজন কৃষক। তার দেখাদেখি বর্তমানে মাঝের চর, মদনপুর চরে ও মনপুরার চরে প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এবছর ভোলার মাঝের চর, মদনপুর চর ও মনপুরার চরে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৭০ হেক্টর।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমএফ/এএসএম