ধর্ম

মুসলিম ও অমুসলিমের হাঁচির জবাব কি এক হবে?

হাঁচি। এটি মানুষের জন্য প্রশান্তি দায়ক। আল্লাহ তাআলা হাঁচি দেওয়াকে পছন্দ করেন। হাঁচি প্রসঙ্গে হাদিসে পাকে অনেক আলোচনা রয়েছে। কিন্তু মুসলিম আর অমুসলিমের হাঁচির জবাব কি এক হবে? এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী করতেন?

Advertisement

হাঁচি দেওয়া প্রসঙ্গে হাদিসের অনেক বর্ণনা রয়েছে। কেউ হাঁচি দিলে কী করতে হবে। যিনি শুনলেন তাঁর করণীয়ই বা কী? হাদিসে এসেছে-

১. হাঁচি দেওয়াকে আল্লাহ পছন্দ করেন

 হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন কিন্তু হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব কোরো ব্যক্তি হাঁচি দেয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা করলে এবং যে কোনো মুসলিম তা শুনতে পেলে হাঁচির জবাব দেওয়া তার জন্য আবশ্যক কর্তব্য। আর হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব কেউ তা যেন যথাসাধ্য প্রতিহত করে। কোন ব্যক্তি হাই তুলে ‘হা’ (মুখ গহব্বর ফাঁক) করলে তাতে শয়তান (আনন্দে) অট্টহাসি দেয়।’ (আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজাইমা)

Advertisement

২. মুসলিমের হাঁচি ও উত্তর

হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তি হাঁচি দিলে যেন বলে-

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

উচ্চারণ : ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’

Advertisement

অর্থ : ‘সব প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর জন্য।’

আর জবাবদাতা (যে শুনবে সে) বলবে-

يَرْحَمُكَ اللَّهُ

উচ্চারণ : ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ।’

অর্থ : আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন।

(হাঁচিদাতা উত্তর শুনে) প্রত্যুত্তরে প্রথম ব্যক্তি যেন বলে-

يَغْفِرُ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ

উচ্চারণ : ইয়াগফিরুল্লাহু লি ওয়ালাকুম’।

অর্থ : আল্লাহ আমাকে ও তোমাদের ক্ষমা করুন।’ (আদাবুল মুফরাদ নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম, তাবারানি)

৩. ইয়াহুদি বা অমুসলিমের হাঁচি

কিন্তু কোনো ইয়াহুদি তথা অমুসলিম যদি হাঁচি দেয় তবে করণীয় কী? হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদি তথা অমুসলিমদের হাঁচির জবাবে কী বলতে হবে তা সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন-

হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইয়াহুদিরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে হাঁচি দিতো এই আশায় যে, তিনি তাদের জবাবে- يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ ‘ইয়ারহামুকুমুল্লাহ’ বলবেন।

কিন্তু তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন-

يَهْدِيكُمُ اللَّهُ، وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ

উচ্চারণ : ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম।’

অর্থ : আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থার পরিবর্তন করুন।’ (আদাবুল মুফরাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসতাদরাকে হাকেম, তাহাবি)

অমুসলিম ও ইয়াহুদিদের জন্য এটি সবচেয়ে বড় কল্যাণের দোয়া। যদি এ দোয়া কবুল হয় তবে সে পাবে সত্যের সন্ধান। হয়ে যাবে নিষ্পাপ মুসলমান।

উল্লেখ্য যে, যদি কেউ বেশি বেশি বা একাধারে ঘণ ঘণ হাঁচি দেয় তবে তা হাঁচি হিসেবে গণ্য হবে না। এটি অসুস্থতা। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হাঁচিদাতার জবাব দাও- একবার, দুইবার, তিনবার, এরপর যা হয়, তা সর্দি।’ (আদাবুল মুফরাদ, আবু দাউদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাঁচির উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। কেননা মুসলিম হাঁচি দিয়েই আল্লাহ প্রশংসা করে। তাই হাঁচিদাতার জন্য দোয়া করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আর অমুসলিম হাঁচি দিলে তো মহান আল্লাহর প্রশংসা করে না। তাই অমুসলিম হাঁচি দিলে তার হেদায়েত ও অবস্থার পরিবর্তের দোয়া করার কথা বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাঁচি দেওয়ার ক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম