সমাজ জীবনে লেনদেন-বেচাকেনা খুবই জরুরি কাজ। আবার প্রয়োজনের তাগিদে এসব কাজে ঋণও দেওয়া-নেওয়ার করতে হয়। এসব লেনদেন বেচাকেনা ও ঋণ আদান-প্রদানে কোমলতা অবলম্বন করলেই বান্দার গুনাহ মাফ হয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।
Advertisement
দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় ঋণ দেওয়া-নেওয়ায় যদি মানুষ পরস্পরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও কোমলতা অবলম্বন করে তবে আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি সহজ ও কোমল হবেন। মানুষের গুনাহ মাফ করে দেবেন। তবে এসব কাজে রয়েছে বিশেষ কিছু করণীয়। তাহরো-
বেচার ক্ষেত্রে সহজতা হলো-
ক্রেতাকে ভালো পণ্যটি দেওয়ার চেষ্টা করা। ক্রেতার প্রয়োজন বিবেচনায় অল্প লাভে পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করা। আবার ক্রেতা বাকি চাইলে তাকে সুযোগ দেওয়া অথবা কেনার পর কোনো কারণে ফেরৎ দিতে চাইলে সম্ভব হলে বিক্রিত মাল গ্রহণ করা এবং মূল্য ফিরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
Advertisement
কেনার ক্ষেত্রে সহজতা হলো-
কথামতো যথা সময়ে মূল্য পরিশোধ করে দেওয়া। মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের টালবাহানা না করা। বিক্রেতার যাতে লাভ হয় সেদিকে ক্রেতার খেয়াল রাখা জরুরি। কোনো মালে সমস্যা থাকলে সেটি বিক্রেতাকে প্রয়োজন ও সমস্যার কথা সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলা। সর্বোপরি কথা হলো- ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপরের সুবিধার প্রতি যথাযথ লক্ষ রাখার মাধ্যমে উত্তম ব্যবহার করা। আর এতেই আল্লাহ তাআলা উভয়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
ঋণ দেওয়া কোমলতা
ঋণ গ্রহণ কিংবা পরিশোধের ক্ষেত্রে কোমলতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা জরুরি। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম কোমল আচরণ হলো- প্রয়োজনে স্বতস্ফূর্ত ঋণ দেওয়া। এরপর সম্ভব হলে ঋণগ্রহিতা যে মেয়াদে ঋণ নিতে চায় তা গ্রহণ করা। ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি সময় দেওয়া। তার সমস্যার কথা শোনা এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে উত্তম আচরণ করা।
Advertisement
ঋণ দেওয়া কোমলতা
ঋণদাতা যেভাবে কোমলতার সঙ্গে বিপদের সময় ঋণ দেয়; ঠিক ঋণ গ্রহিতার উচিত, যথা সময়ে তা পরিশোধের চেষ্টা করা। ঋণ পরিশোধে একন্ত অপারগ হলে আগে থেকেই কোমলতা ও বিনয়ের সঙ্গে সময় চেয়ে নেওয়া। ঋণ পরিশোধে অপরাগ হলে কোনোভাবেই টালবাহানা বা দ্বিমুখী কথার আশ্রয় না নেওয়া। একান্তই সমস্যা না থাকলে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করা এবং ঋণদাতার জন্য কল্যাণের দোয়া করা। তবেই আল্লাহ উত্তম আচরণকারী হিসেবে উভয়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
কোমলতা গুনাহ মাফে বিশ্বনবির ঘোষণা
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
غَفَرَ اللهُ لِرَجُلٍ كَانَ مِنْ قَبْلِكُمْ، كَانَ سَهْلًا إِذَا بَاعَ، سَهْلًا إِذَا اشْتَرَى، سَهْلًا إِذَا قَضَى، سَهْلًا إِذَا اقْتَضَى
আল্লাহ তাআলা আগের উম্মতের এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন; কারণ সে বেচা-কেনার সময় সহজতা (কোমলতা) অবলম্বন করত। ঋণ আদায়ের সময়ও সহজতা অবলম্বন করতেন। অন্যের কাছে ঋণ তলবের সময়ও কোমলতা অবলম্বন করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, বাইহাকি)
পরিশোধের সময় ঋণদাতার জন্য দোয়া
ঋণ নেওয়ার পর তা যথাসময়ে পরিশোধ করা উত্তম। আর ঋণ পরিশোধের সময় ঋণদাতার জন্য দোয়া করা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ঋণদাতার জন্য দোয়া করেছিলেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইসমাইল ইবনে ইবরাহিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রাবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছ থেকে চল্লিশ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর কাছে মাল (সম্পদ) আসলে তিনি তা আদায় করেন। আর এ বলে দোয়া করেন-
بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ
উচ্চারণ : ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা'
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা তোমার ঘরে এবং মালে (সম্পদে) বরকত দান করুন।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, লেনদেন, বেচাকেনা ও ঋণ দেওয়া-নেওয়া পরস্পরের সঙ্গে কোমলতা অবলম্বন করা। একে অপরকে সহজ সুযোগ দেওয়া। বিশেষ করে ঋণ পরিশোধের সময় ঋণদাতার জন্য কল্যাণের দোয়া করা। আর এতে মহান আল্লাহ বান্দার গুনাহ ক্ষমা করবেন। উভয়কে দান করবেন অফূরন্ত বরকত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহ মাফ ও বরকত লাভে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম