আকাশ আরও অসীমে মিলে যায় এ বেলায়। পেঁজাতুলো মেঘের ভেলা লেপ্টে থাকে, যেন খণ্ড খণ্ড বরফ জমে আছে আকাশের গায়। এতো রূপ ঠিক মেলে না অন্য সময়। বর্ষার ঘনঘটা আর বারিধারা নিংড়ানো রূপের যে সমারোহ, তা শরতে এসে পূর্ণ হয়।
Advertisement
অথচ সে রূপ কোথায় যেন উবে গেল! এখনো থেমে থেমে ঝরছে বৃষ্টি। হঠাৎ আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে কালো মেঘে। দুপুরের কড়ারোদ আর ভ্যাপসা গরম হাঁসফাঁস নামাচ্ছে জনজীবনে।
জলবায়ু আর আবহাওয়ার যে বৈরী লগ্ন, তা রূপবতী শরৎকে করে তুলছে রূপহীন। তাই শরৎ নিয়ে হতাশাও ঘিরে ধরছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।
রাজধানীর আফতাব নগরে ঘুরতে এসেছেন নীলা। সঙ্গে আরও দুই বান্ধবী। নগরের সিদ্ধেশ্বরীতে থাকেন। গত ক’বছর হয় এখানে আসেন শরতের ছোঁয়া পেতে। এবারের ভাদ্রের শেষবেলায় এসেও ঠিক আগের রূপ পাননি।
Advertisement
বলেন, ‘শহরের উপকণ্ঠে এমন জায়গা মেলা ভার। কাঁশবন। পাশেই বিল। অসীম আকাশ। দারুণ! বেশ ক’বছর ধরে এখানে ঘুরতে আসি। এবারও বান্ধবীদের সঙ্গে এসেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে, বর্ষার আবহ রয়েই গেছে। পঞ্জিকার চাকায় শরৎ আগেই চলে এলেও প্রকৃতিতে হয়তো আসবে আরও পরে। কাশফুল এখনো সেভাবে ফোটেনি। এই মেঘ এই বৃষ্টি। এমন তো শরতের রূপ নয়।’
শ্রাবণের ঢল ভাদ্রের শেষবেলায়ও নামলে শরতের রূপে ভাঁজ পড়ে। এবার তাই ঘটেছে। অবশ্য শেফালি, জুঁই, মালতী, টগর, কামিনী সবই ফুটে গেছে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের মতে, ঋতু রাজ্যে শরৎ আসে অন্তহীন রূপের খেলা নিয়ে। রঙ্গের খেলায় মেতে ওঠে প্রাণ-প্রকৃতি। বর্ষণ বিধৌত প্রকৃতি এসে একবারে শুদ্ধ হয় ভাদ্র-আশ্বিনের প্রেমমেলায়। বর্ষার নিদারুণ সর্বনাশটুকু থাকে না এ সময়। মেঘমুক্ত আকাশ, তাতে সাদা মেঘের খানিক লুকোচুরি। সুউচ্চ শরৎ আকাশে থাকে আলো-ছায়ার খেলা। নদীতীরে থাকে কাঁশফুলের মনকাড়া ছোঁয়া। প্রভাতে তৃণপল্লবে থাকে সূর্যকণার হেয়ালিপনা। শুভ্র জ্যোৎস্নায় মাধবী রাত্রী। কিন্তু এবার যেন সব বহুদূর।
বর্ষার শেষ দিকেই সূর্যের তেজ কমার কথা। এবার তা কমেনি। তাই বলে এমন দাবদাহ শরতেও থাকবে? যেন ঋতু পরিবর্তনের ধারাপথে ঘোর লেগেছে। জ্যৈষ্ঠের সূর্য ভাদ্রে এসে মাথার ওপরে খাড়া। কোথায় যেন শরৎ রূপ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। শরতের সয়ে আসা মিষ্টি রোদ এবার পোড়াচ্ছে দাবদাহে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এ যেন এক অচেনা শরৎ।
Advertisement
এএসএস/এইচএ/এমএস