মানুষ যে কতোটা অমানুষ হতে পারে এর নজির দেখা গেল গৃহবধূ শিউলি আক্তারের ওপর চালানো বর্বর নির্যাতন থেকে। পাষণ্ড স্বামী জুয়েল হাসান চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তার দুই চোথ তুলে নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার টঙ্গির জামাইবাজার এলাকায় এই পৈশাচিক ঘটনা ঘটে। হাত পা বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে স্ত্রীর ওপর এই পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় ঘরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় জুয়েল হাসান। পরে প্রতিবেশি ও স্বজনরা খবর পেয়ে শিউলি আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করে। শিউলির ওপর অমানুষিক নির্যাতনের কারণ তার আগের প্রয়াত স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া সম্পদ বিক্রি করে জুয়েলকে টাকা না দেওয়া। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর পরিবারের সবার অমতে জুয়েল হাসানকে ভালোবেসে বিয়ে করে শিউলী আক্তার। প্রথম কিছুদিন ভালই যাচ্ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। নেশাগ্রস্ত জুয়েল হাসানোর চোখ পড়ে শিউলীর পূর্বের মৃত স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া সম্পদের ওপর। শিউলী তার সন্তানের কথা ভেবে সম্পদ নষ্ট করতে চায়নি। তাছাড়া নেশাগ্রস্ত স্বামীকে সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।কিন্তু কে শুনে কার কথা। আর ভালোবেসে বিয়ে করলেও তার কানাকড়ি মূল্যও দেয়নি জুয়েল হাসান। নইলে কোনো মানুষ আরেকজন জ্যান্ত মানুষ, যে তার স্ত্রী এবং ভালোবেসে যে তাকে বিয়ে করেছে-এই রকম একজনের চোখ তুলে নিতে পারে? যা কল্পনাও করা যায় না বাস্তবে হয়েছে তাই। আর এ মাশুল দিতে হবে সারাজীবন শিউলি আক্তার আর তার সন্তানদের।শিউলি আক্তার এখন হাসপাতালে শুয়ে কাঁতরাচ্ছে। তার দুটো চোখই চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এমনভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ নষ্ট করা হয়েছে যে তা আর আরোগ্যযোগ্য নেই। ফলে সারাজীবন অন্ধ হয়েই থাকতে হবে তাকে। এছাড়া চেহারা ঠিক রাখার জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে। এ সবই ব্যয়বহুল। শিউলি আক্তারের পক্ষে তা কতোটা সম্ভব হবে সেটি দুশ্চিন্তার বিষয়। আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এটি এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো উসিলায় চলে নির্যাতন। তাই বলে এ রকম নির্মম পাশবিকতায় ছেয়ে যাবে সমাজটা এটা ভাবা যায় না। নির্যাতক জুয়েল এখন পলাতক। তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এ ধরনের অপরাধ থেকে তাদের নিবৃত্ত করতে। তাছাড়া মানবিকতারও উন্মেষ ঘটাতে হবে। প্রাণীকূলের মধ্যে মানুষেরই জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেক আছে। হিতাহিত জ্ঞান দ্বারা সে বুঝতে পারে কী করলে কী হবে। এই বোধ থাকার পরও মানুষ কী করে অপরাধকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয় সেটি ভাবনার বিষয়।এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা থেকে সমাজকে বের করে আনাটা জরুরি। আইনের শাসনদণ্ড তো আছেই এর বাইরেও নীতি-নৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। এছাড়া মাদক এখন এক বিরাট সমস্যা। মাদক দ্রব্য যাতে সহজলভ্য না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযানের কোনো বিকল্প নেই। এইচআর/এমএস
Advertisement