ধর্ম

শান্তি-শৃঙ্খলার অনন্য দৃষ্টান্ত বিশ্বনবি

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বময় শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পারস্পরিক অভিভাদন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার অগ্রসেনানী তিনি। বিশ্বনবি বলেছেন, ‘দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো কথা বলার আগেই সালাম দাও।’ অর্থাৎ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। যার অর্থ হলো- আপনার উপর শান্তি, অনুগ্রহ ও কল্যাণ নাজিল হোক।

Advertisement

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ঘোষণাই প্রমাণ করে যে, বিশ্বনবি কী পরিমাণ শান্তিকামী ছিলেন! আজও সালামের সে রীতি মুসলমানের মাঝে অব্যাহত। সে কারণে মুমিন মুসলমানও শান্তিকামী।

পক্ষান্তরে যার বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত সালামের বিরোধীতা করে- তাদের অবস্থান কি? তারা কি সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা চায়? বরং সালামের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে বরং তারাই সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির চেষ্টা লিপ্ত। আল্লাহ তাদের কুচক্রান্ত থেকে দেশ ও জাতিকে হেফাজত করুন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনভর অশান্তি, উগ্রতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলে দক্ষ সংগঠক। অশান্ত আরবে বছরের পর বছর যুদ্ধ-বিগ্রহ, অন্যায়-অত্যাচার তাকে এতটাই ভবিয়ে তুলেছিল যে, তিনি উগ্রতা ও অত্যাচার বন্ধে গঠন করেছিলন অনন্য সংগঠন ‘হিলফুল ফুজুল’।

Advertisement

নবুয়ত লাভের আগে যেমন তিনি ধ্বংসাত্মক ও মনোমালিন্য কাজকে পছন্দ করতেন না। যার প্রেক্ষিতে তিনি কাবা ঘরে হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসে চরম উগ্রতা থেকে বাঁচিয়েছেন মক্কার গোত্রপতিদের। তেমনি নবুয়ত লাভের পরও তিনি চরম জুলুম অত্যাচার স্বীকার করেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে গেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজীবন অন্যায়, অবিচার ও হিংসাত্মক উগ্রতা দমনে সচেষ্ট ছিলেন। সমাজ পরিবর্তনে তিনি কখনই উচ্ছৃঙ্খলতা দেখাননি। দয়া, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা ছিল তার চরিত্রের ভূষণ। যে কারণে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-‘(হে রাসুল!) নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’

তিনি কোনো দিন ইসলামের চরম দুশমনের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেননি। ভিন্ন ধর্মের লোকের প্রতিও তিনি দেখাননি বিন্দুমাত্র অবহেলা। মসজিদে নববির সে ঘটনায়ই এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ের স্পন্দন মসজিদে নববি। যেখানে বসে বিশ্বনবি রাষ্ট্র পরিচালনাসহ সার্বিক কাজ তথা ইবাদত-বন্দেগি করতেন। সাহাবায়েকেরামের মিলনমেলার স্থল ছিল এ মসজিদে নববি। সেখানের একটি ঘটনা থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায়, বিশ্বনবি ছিলেন শান্তি স্থাপনের প্রতীক।

Advertisement

মসজিদে নববিতে ভিন্ন ধর্মের এক ব্যক্তি পেশাব করে দেয়। যা দেখে সাহাবায়েকেরাম রেগে গেলে বিশ্বনবি তাঁদের থামিয়ে দিলেন। শান্তিতে পেশাব শেষ করার সুযোগ দিলেন ভিন্নধর্মী ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়েকেরামের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘যে কোনো বিষয় সহজভাবে নেবে। কোনোভাবেই উগ্রতা দেখানো যাবে না।

তারপর তিনি এক বালতি পানি এনে জায়গাটি পরিষ্কার করলেন। এরপর লোকটিকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন, এটি তো পেশাবের জায়গা নয়, বরং নামাজ ও আল্লাহর জিকিরের জায়গা। এতে লোকটি তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হল। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)

তিনিই ছিলেন বিশ্বনবি। যিনি ছিলেন শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার জীবনেই রয়েছে উম্মতের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ ঘোষণা দেন-‘অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে রয়েছে উম্মতের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।’

যে জন্মভূমি থেকে তিনি চরম নির্যাতন ও অত্যাচারিত হয়ে মদিনায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে জন্মভূমি বিনা রক্তপাতে জয় করার পরও কারো প্রতি তিনি জুলুম করেননি। শক্তি, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি কারো প্রতি কঠোরতা দেখাননি। বরং ক্ষমা ও শান্তির জন্য বিশ্বব্যাপী এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সর্বোপরি বিদায় হজের ভাষণে তিনিই ঘোষণা করেছেন জগতের সেরা শান্তি ও শৃঙ্খলার বাণী। তিনি দুনিয়া থেকে চিরতরে উগ্রতা, অনৈক্য, অশান্তি, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলাকে নিষিদ্ধ করেন। উড়িয়েছেন শান্তি, সম্প্রীতি, উদাদরতা, মানবতা ও শৃঙ্খলার পতাকা।

রবিউল আউয়াল হোক বিশ্বব্যাপী সব মুসলিম উম্মাহর জন্য শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অনন্য মাস। ফ্রান্সসহ বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিদ্বেসীদের প্রতি আহ্বান- আসুন, ইসলামের পতাকা তলে আশ্রয় গ্রহণ করি। ইসলামই শান্তি ও শৃঙ্খলার এক অনন্য জীবন ব্যবস্থা।

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে ইসলামের শান্তি ও শৃঙ্খলাময় জীবন গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস