ধর্ম

যাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ বিশ্বনবি

যাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ বিশ্বনবি

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। তবে এসব গুণ ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম একটি হলো- তিনি আল্লাহভিরুদের জন্য উসওয়ায়ে হাসান বা সর্বোত্তম আদর্শ।

Advertisement

যাদের জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসওয়ায়ে হাসানাহ বা উত্তম আদর্শ তাদের কথাসহ কুরআনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের (চরিত্রের) মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ২১)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানব জাতীর জন্য বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ দিয়ে সবাই উপকৃত হতে পারবে না। বরং তারাই উপকার পাবে যারা-> আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে।> আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে।

মুমিন ও মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করে এ আয়াত ঘোষণা করা হয়েছে। হে মুমিন ও মুনাফিকরা! তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যক্তিত্বে উত্তম আদর্শ রয়েছে। সুতরাং তোমরা দুনিয়ার প্রতিটি কাজে তারই অনুসরণ কর।

Advertisement

এটি ব্যাপক নির্দেশমূলক আয়াত। মুমিন মুসলমানের জীবনের সব কথা কাজ ও অবস্থায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণ আবশ্যক। তা হতে পারে ইবাদত সম্পর্কিত। সামাজিক বিষয় সম্পর্কিত। জীবিকা সম্পর্কিত। রাজনীতি বা রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত। এক কথা মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রিয় নবি নিঃশর্ত অনুসরণ ও অনুকরণ প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আবার এ আয়াতে আরও একটি বিষয় সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে ওই ব্যক্তি আদর্শবান হবে-- যে ব্যক্তি পরকালে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতে বিশ্বাসী। অর্থাৎ আল্লাহ ও পরকালের বিষয়ে ভয় করে।- যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে।

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মুসলমান এ শর্ত দুটিকে বাদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে আদর্শবান হতে চায়। অধিকাংশ আলোচনা কিংবা বক্তব্যেও শর্ত দুটির উল্লেখ করা হয় না। অথচ এ দুটি শর্ত ব্যতিত প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে আদর্শবান হওয়ার সুযোগ নেই।

বাস্তবেও দেখা যায়, বলা বা লেখার ক্ষেত্রে সেরা আদর্শ বিশ্বনবি। আর মানার ক্ষেত্রে আদর্শ হয়ে যায় নেতা-নেত্রী। এমনটি কুরআনের ঘোষণা নয়।

Advertisement

মনে রাখতে হবেপ্রিয় নবিকে আদর্শ হিসেবে মেনে নেয়া কিংবা ভালোবাসার কথা মুখে মুখে দাবি করার বিষয় নয়। বরং তার কথা-কাজ পুরোপুরি অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। আর আল্লাহ তাআলা কুরআনের অন্য আয়াতেও এ নির্দেশই দিয়েছেন-- ‘রাসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।’ (সুরা হাশর : আয়াত ৭)- (হে রাসুল!) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

কুরআন হলো আল্লাহর নির্দেশ আর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন এ কুরআনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নকারী। যাতে ছিল না বিন্দুমাত্র হেরফের।

সুতরাং শুধু মুখে মুখে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা নয়, বরং কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রিয় নবিকে ভালোবাসা ও তার অনুসরণ ও অনুকরণ করা, আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করা এবং প্রত্যেক কাজে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করাই ঈমানের একান্ত দাবি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ মোতাবেক কথা, কাজ ও অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে আদর্শবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ