ধর্ম

করোনা চিকিৎসায় হাদিসের যে ৬ উপদেশ দিলো হারামাইন

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় পুরো বিশ্ব অচল। মহামারি ও রোগ-ব্যধি সম্পর্কে কুরআন-সুন্নায় অনেক আলোচনা এসেছে। তা থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভে রয়েছে অনেক দিকনির্দেশনা। পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনার হারামাইন কর্তৃপক্ষ মহামারি করোনা প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা লাভে ৬ নবুয়তি উপদেশ তুলে ধরেছে।

Advertisement

বিশ্বনবির এ উপদেশগুলোই করোনার চিকিৎসা ও সচেতনতায় বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকরা পালন করে যাচ্ছেন। হারামাইন ঘোষিত ৬টি নবুয়তি উপদেশ তুলে ধরা হলো-

>> সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখামহামারি করোনার এ সময়ে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় দূরুত্ব বজায় রাখা। আর যারা করোনায় আক্রান্ত দূরুত্ব বজায় রেখে তাদের আলাদা ব্যবস্থাপনায় রাখাও জরুরি। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘যারা সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত তাদের উচিত যারা সুস্থ তাদের থেকে দূরত্বে অবস্থান করা।’ (বুখারি ও মুসলিম)

>> ভ্র্রমণ বা যতায়াত নিষিদ্ধমহামারি করোনার এ সময়ে কোনো এলাকায় যাতায়াত না করাই উত্তম। রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনায় বিভিন্ন জেলা শহরে চলছে লকডাউন। হাদিসে লকডাউন সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)

Advertisement

>> ঘরে অবস্থান করাকরোনা মোকাবেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনোভাবেই ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। মহামারিতে ঘরে অবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরতে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কুষ্ঠ (মহামারি) রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।’ (বুখারি)

>> মহামারিতে ঘরে ইবাদতদুর্যোগ কিংবা মহামারিতে মানুষের জীবনে ক্ষতি হবে এমন পরিস্থিতে ঘরে জামাআত, নামাজ ও ইবাদতের দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকেই তা প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে-হজরত নাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, প্রচণ্ড এক শীতের রাতে হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যাজনান নামক স্থানে আজান দিলেন। অতপর তিনি ঘোষণা করলেন- صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ অর্থাৎ তোমরা আবাস স্থলেই নামাজ আদায় করে নাও।’পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে (ঘরে) নামাজ আদায় কর।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

>> চিকিৎসা গ্রহণ ও সতর্কতা অবলম্বনযে কোনো রোগ-ব্যধি কিংবা মহামারি থেকে নিরাপদ থাকতে সতর্কতা অবলম্বন এবং চিকিৎসাগ গ্রহণের উপদেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি। কুরআন-সুন্নায় অসংখ্য চিকিৎসা, পথ্য ও পদ্ধতির বর্ণনা রয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণ সম্পর্কে বিশ্বনবি ঘোষণা করেন-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ পাঠাননি, যার আরোগ্যের ব্যবস্থা তিনি দেননি।’ (বুখারি)

>> ঘন ঘন হাত ধোয়ামানুষের হাতের মাধ্যমে করোনাসহ যাবতীয় মহামারি ও রোগ-ব্যধি ছড়িয়ে পড়ে। সে কারণে সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে কারণে খাওয়ার আগে উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো কিছু খাবার বা পান করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতেন।’ (নাসাঈ)

Advertisement

বর্তমান সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানও মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে হাদিসের এ ৬টি দিকনির্দেশনা মেনে চলতে জোর দিয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। যারা হাদিসের এ দিকনির্দেশনা যথাযথ মেনে চলবে তাদের তাকদিরে মৃত্যু না থাকলে এ কথা সুনিশ্চিত যে, কোনো ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হবে না। আর করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। করোনাসহ যাবতীয় মহামারি ও রোগ-ব্যধি থেকে নিরাপদ ও হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর