দেশজুড়ে

রাস্তায় দুধ ঢেলে খামারিদের প্রতিবাদ

দুগ্ধ সংগ্রহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ বন্ধ রাখায় দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাবনার দুগ্ধ খামারিরা। দুধ সংগ্রহের দাবি জানিয়ে সোমবার দুপুরে শতাধিক দুগ্ধ খামারি ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন। পরে তারা রাস্তায় দুধ ঢেলে সংগ্রহ বন্ধের প্রতিবাদ জানান।

Advertisement

মানববন্ধনে খামারি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এ উপজেলায় প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়, যা দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমরা বিক্রি করি। কিন্তু তারা আর দুধ নিচ্ছে না। তাহলে আমরা দুধ নিয়ে কোথায় যাব?’

আরেক খামারি আলহাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরুর খামার করেছি, কিন্তু আজ দুধ বিক্রি করার জায়গা নেই। ঋণের কিস্তি দিতে পারছি না।’

এ সময় আরও বক্তব্য দেন খামারি জুয়েল, আবু সাইদ ,আমজাদ, আলামিন ও খোকন বিশ্বাস । বক্তারা দ্রুত পুনরায় দুগ্ধ সংগ্রহ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান।

Advertisement

খামারিদের হাতে ছিল বিভিন্ন রঙের ফেস্টুন, যাতে লেখা ছিল ‘দুধ সংগ্রহ বন্ধ কেন? জবাব চাই দিতে হবে’, ‘দুধ সংগ্রহ করতে হবে’, ‘নিরীহ দুগ্ধখামারিদের আজ সংকট কেন? জবাব চাই’। মানববন্ধন শেষে তারা রাস্তায় দুধ ঢেলে দুধ সংগ্রহ বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানান।

মিল্ক ভিটার ভাঙ্গুড়া চিলিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ, আকিজ ও বারো আউলিয়া নামে দুগ্ধ সংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো এ উপজেলা থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করত। মূলত মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণেই তারা বর্তমানে দুধ সংগ্রহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। ফলে দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে খামারিরা। এ জন্য দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাধীনতার পর বৃহত্তর পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুরা, শাহজাদপুরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং বাণিজ্যিকভাবে অনেকগুলো দুগ্ধ উৎপাদন খামার গড়ে উঠেছে। দুগ্ধ উৎপাদন এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এসব এলাকা এখন দেশের অন্যতম প্রধান দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের দেয়া তথ্য মতে, পাবনা জেলায় প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখ লিটারের বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৭০-৮৫ ভাগ লিটার দুধ প্রাণ, মিল্ক ভিটা, আফতাব, আকিজ, ব্রাকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুধ কিনে প্রক্রিয়াজাত করে রাজধানীতে পাঠাতে এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি চিলিং সেন্টার স্থাপন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় ঘোষরা প্রতিদিন ৩০-৫০ হাজার লিটার দুধ কেনেন। বাকি দুধ খুচরা বেচাকেনা হয়।

Advertisement

সূত্র মতে, সাঁথিয়ায় প্রতিদিন ১ লাখ ৭ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন দেড় লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বেড়ায়ও প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। সুজানগর থেকেও এখন বিপুল পরিমাণ দুধ উৎপাদন হচ্ছে।

একে জামান/আরএআর/জেআইএম