জাতীয়

বানভাসি মানুষের পাশে জাগো নিউজ ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু বাঁধের ওপরে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির দুষ্প্রাপ্যতা, সেই সঙ্গে গবাদি পশুর নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব। সব মিলিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের বেশকিছু এলাকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে অসহায় জীবন পার করছেন বানভাসি মানুষ। টানা বৃষ্টি ও ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে খাবার নেই, নেই থাকার জায়গা। দুর্গত এলাকা হওয়ায় পৌঁছায়নি তেমন ত্রাণসামগ্রী। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় মানুষের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে প্রতিবারের মতো এবারও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম। এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করছে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছায় জাগো নিউজের টিম। আগে থেকেই শতশত বানভাসি মানুষ অপেক্ষা করছিলেন গডিমারি ইউনিয়নের তিস্তা ব্যারেজের কন্ট্রোল রুমের সামনে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় ত্রাণ বিতরণ।

Advertisement

এ সময় জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, ‘বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বন্যার্তদের জন্য এবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগিতায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- চাল, ডাল, মুড়ি, পানি, বিস্কুট, স্যালাইনসহ নানা খাদ্যসামগ্রী।’

হাতিবান্ধা উপজেলার গডিমারি ইউনিয়নের দোয়ানী, ছোয়ানি এলাকার শতশত মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন ত্রাণের জন্য। সেখানে অপেক্ষমান দোয়ানী এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবাই বানভাসি মানুষ, খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। দেশের শেষ প্রান্ত হওয়ায় আমাদের এখানে কেউই ত্রাণ নিয়ে আসে না। প্রতিটি পানিবন্দি মানুষ চাতক পাখির মতো চেয়ে থেকে সামান্য ত্রাণের জন্য। এ অবস্থায় দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগিতায় জাগো নিউজের এই উদ্যোগে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সবসময় তাদের জন্য দোয়া করব, কারণ আমাদের বিপদে তারা পাশে দাঁড়িয়েছে।’

আব্দুল গফুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘প্রায় দুই মাস ধরে আমরা পানিবন্দি, ভাসমান মানুষ। অনেকের ঘরে খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই। রান্না করার চুলা ডুবে গেছে। ঘরের মধ্যে একটি খাটের ওপর আরেকটি খাট দিয়ে দ্বিতল করে থাকছি। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলদের রেখেছি কলা গাছের ভেলার ওপর। অনেক সময় আমরা না খেয়ে দিন পার করছি, থাকারও জায়গা পাচ্ছি না। দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা, শুধু শুকনো খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছি আমরা। এ অবস্থায় জাগো নিউজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ত্রাণের খবর পেয়ে শতশত দুঃখী মানুষ এসে লাইনে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই তাদের এই উদ্যোগের জন্য তাদেরকে ভালোবাসবো, প্রাণভরে দোয়া করবো।’

শুক্রবার লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ থেকে চার দিনব্যাপী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়। লালমনিরহাট ছাড়াও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এবারের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম দলে রয়েছেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিয়াউল হক, সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, ওয়েব ইনচার্জ হাসিবুল হাসান আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়সাল খান ও নিজস্ব আলোকচিত্রী মাহবুব আলম।

Advertisement

প্রসঙ্গত, চলমান বন্যায় এ পর্যন্ত দেশের ১৭ জেলায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ মানুষগুলোর পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৯টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরকারি তথ্যমতে, বন্যায় সারা দেশে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসল এবং পাঁচ হাজার ২১৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবারের (২৫ জুলাই) বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির সর্বশেষ তথ্য জানা গেছে।

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা দেখা দেয়। পরে মধ্যাঞ্চলেও বন্যার বিস্তৃতি ঘটে। উন্নতির দিকে যাওয়ার পর অতিবৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, ধরলা এবং তিস্তা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে কমছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং কাছাকাছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল ও বিহারের কিছু স্থানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে। অপরদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলেও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে।

এএস/এমআরএম/এমএস