গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ১৪ জুলাই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মস্ত্রণালয় ঘেরাও করবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আর ১৯ জুলাই প্রতিনিধি সম্মেলন করবে রাজনৈতিক এই জোটটি। রোববার পল্টন মোড় অবরোধ করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের সমন্বয়ক মোশাররফ হোসেন নান্নু।
Advertisement
১৪ ও ১৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জোটটি। সেই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসলে সারাদেশ অচল করে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট।
গত ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্য দুই চুলায় ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার ঘোষণা দেয়া হয়। সরকারের নির্দেশ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
গ্যাসের এই মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার দেশব্যাপী আধাবেলা হরতাল ডাকে বাম জোট। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা। আর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরানা পল্টন মোড় অবরোধ করে জোটটি।
Advertisement
প্রায় দুই ঘণ্টা পল্টন মোড় অবরোধ করে রেখে দুপুর দেড়টার দিকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই মোড়টি থেকে সরে যান বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা। এরপর শুরু হয় যানবাহন চলাচল।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, দেশের মানুষের অতি প্রয়োজনী গ্যাসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব পণ্যের দাম বাড়বে। কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এর প্রভাব পড়েবে সাধারণ জনগণের ওপর। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাই।
‘সরকার যদি আমাদের এই আহ্বান না মেনে নেয় তাহলে আগামী ১৪ জুলাই সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ এবং একই দিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে। এরপরও সরকার নিজেদের অবস্থান থেকে সরে না আসলে ১৯ জুলাই প্রতিনিধি সম্মেলন করে লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে অচল করে দেয়া হবে’ বলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক।
তিনি বলেন, বাসা-বাড়িতে কোনো সময়ই ৪৫ থেকে ৫০ ইউনিটের বেশি গ্যাস খরচ হয় না। বিদ্যুতে সিস্টেম লসের সম্ভাবনা না থাকলেও ক্ষমতাবানরা, আমলারা ১২ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস দেখায়। সরকার আবারও সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা লুটপাটের মহোৎসব করতে চায়। আমরা এটা হতে দেব না। আমরা জনগণের দাবি আদায়ে সবসময় রাজপথে থেকে গণমানুষের দাবি আদায় করব।
Advertisement
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, দেশের মানুষ কোনো সময়ই মাফিয়াদের থেকে মুক্ত হতে পারেনি। যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারাই লুটপাট করেছে। এর আগের সরকার বলেছিল দেশ নাকি তেলের ওপর ভাসছে। তারা ভারতে তেল রফতানির কথা বলেছিল। বর্তমান সরকার নিজেদের গ্যাসের কথা ভুলে যেয়ে এলএনজি আমদানি করতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিতে চায়। এতে কারখানার পণ্য উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে যাবে, এর চাপ আসবে জনগণের ওপর। সরকার গণগন্ত্রের নির্বাসন দিয়ে এখন সম্পদের অপব্যবহার করতে চায়। আমরা সাম্রাজ্যবাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, জনগণের যৌক্তিক দাবি আদায়ে আমাদের হরতালে সবার সমর্থন ছিল। সরকার জোর করে কিছু গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দিয়েও হরতাল প্রতিরোধ করতে পারেনি। হরতাল পালনকালে রংপুর, ময়মনসিংহে আমাদের মিছিল ঘেরাও করে রাখা হয়, চাঁদপুর ও খুলনায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, খুলনায় নির্যাতন করা হয়েছে এসব ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে সরকারকে বলেতে চাই, এসব বন্ধ করুন, আগুন নিয়ে খেলবেন না, এই আগুনে একদিন আপনারা নিজেরাই শেষ হয়ে যাবেন।
পল্টন মোড় থেকে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ককারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাফি রতন, যুগ্ম সম্পাদক জহির চন্দন প্রমুখ।
এমএএস/জেইউ/বিএ/জেআইএম