জাতীয়

দুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া প্রতিবেদন ভিত্তিহীন : মিল্ক ভিটা

মিল্ক ভিটার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি বিভাগের প্রতিবেদন মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বলে জানিয়েছে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মিল্ক ভিটা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. দেলোয়ার হোসেন এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া মিল্ক ভিটার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার প্রতিবেদন মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ প্রতিবেদনটির দায় অস্বীকার করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

এ সময় তিনি আমদানি করা বাল্ক গুঁড়া দুধের ওপর শতকরা ১০ ভাগ থেকে ২৫ ভাগ ট্যাক্স বৃদ্ধিসহ দুগ্ধশিল্প দুগ্ধ সমবায়ী কৃষকদের রক্ষায় সাতটি সুপারিশ তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন > দুধ নিয়ে বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে হাইকোর্টের সন্তোষ

গত ২৫ জুন বায়োমেডিকেল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক ও ঢাবির ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক সংবাদ সম্মেলনে এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন। মিল্কভিটাসহ সাতটি ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, ‘পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলোতেই লেভোফ্লক্সাসিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ছয়টি নমুনায় এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।’

Advertisement

এ গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুধ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যে তথ্য দিয়েছেন তা আমরা বিশ্বাস করি না। এটা ঠিক নয়। আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা পাউডার দুধ আমদানি করেন। ইউরোপের ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশে দুধ থেকে ফ্যাট বের করে নেয়ার পর যেগুলো ইউজলেস থাকে সেগুলো বাল্ক হিসেবে এনে এখানে কম দামে বিক্রি করে। তারা (ব্যবসায়ীরা) মিল্কভিটার ক্ষতি করেন।’

আরও পড়ুন > দেশীয় দুগ্ধশিল্প নষ্ট করতেই এ প্রতিবেদন : প্রতিমন্ত্রী

তিনি বলেন, ‘এবার বাজেটে গুঁড়ো দুধ আমদানির ওপর আরও ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করেছেন। তারা মিল্কভিটাকে ডাউন করতে চান। আমি এ বিষয়ে সংসদে বক্তব্য দিয়েছি।’

স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর থেকেও মিল্কভিটার দুধ পরীক্ষা করে এনেছি। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই দুধে কোনো ফরমালিন নেই, কোনো আর্সেনিক নেই, এটা পিওর দুধ। এসব ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে।’

দুধ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ঢাবি শিক্ষকের ওই রিপোর্টটি অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।

দুগ্ধশিল্প খাতটি বিকাশমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ রিপোর্টের কারণে তারাও (দুগ্ধশিল্প মালিকরা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়িক স্বার্থে এটা করে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিল্কভিটাসহ দেশীয় দুগ্ধশিল্প যাতে নষ্ট হয়, সেজন্যই এটা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা গতকাল (২৬ জুন) মিল্কভিটার পক্ষ থেকে প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিবাদ দিয়েছি। আমরা এ প্রতিবেদন স্ট্রংলি অপোজ (শক্তভাবে প্রত্যাখ্যান) করে বলেছি, এটা মিথ্যা বা এটা অসত্য বা এটার কোনো প্রমাণ নেই।’

এদিকে বাজারে থাকা ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধ পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কিছু পাওয়া যায়নি আদালতে জমা দেওয়া বিএসটিআইয়ের এমন প্রতিবেদন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষকদের করা পরীক্ষার রিপোর্টও দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সন্তোষ প্রকাশ করে এ আদেশ দেন।

এ সময় আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসানকে (মামুন) ঢাবির ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে করা পরীক্ষার রিপোর্টও জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। আগামী রোববারের (৭ জুলাই) মধ্যে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ২৫ জুন পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধ পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বিএসটিআই জানায় ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত/ইউএইচটি দুধে আশঙ্কাজনক কিছু নেই।

ব্র্যান্ডগুলো হলো- পুরা, আয়রান, আড়ং ডেইরি, ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, মো, মিল্ক ভিটা, আফতাব, আল্ট্রা, তানিয়া (২০০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম), ইগলু, প্রাণ মিল্ক, ডেইরি ফ্রেশ, মিল্ক ফ্রেশ, এবং কাউহেড পিওর মিল্ক।

২০১৮ সালের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনগুলো আদালতে নজরে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০ মে হাইকোর্টের রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভির আহমেদ।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে বাজারে পাওয়া যায় এমন সকল ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করা ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে অন্য সদস্যরা হলেন- খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ডেইরি মাইক্রো বায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রতিনিধি, ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের সহযোগী গবেষক ও প্রধান ড. মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ন্যাশনাল কনসালটেন্টের ডা. কুলসুম বেগম চৌধুরী, বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপসচিব আবু সহিদ ছালেহ মো. জুবেরী।

এসআর/জেআইএম