জাতীয়

ভেজাল ব্যবসায়ীরা নীরব ঘাতক, ফাঁসিই তাদের শাস্তি : র‌্যাব ডিজি

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কোথায় ভেজাল নেই। খাবারে ভেজাল, রেস্টুরেন্ট, রাস্তার দোকানেও। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল। দুধের মধ্যে পানি তা-ও কিন্তু ভেজাল। ব্যবসায়ীরা গরুর খাদ্য ঘোষণায় মেয়াদোত্তীর্ণ শিশুখাদ্য আমদানি করছেন। অথচ নতুন মেয়াদের তারিখ বসিয়ে বিক্রি করছেন। এরা আসলে নীরব ঘাতক। এরা নীরবে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করছে। ফাঁসিই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশ রিটেইল ফোরাম আয়োজিত ‘সুপারস্টোরে পণ্যের মান রক্ষণাবেক্ষণ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘একটি সভ্য দেশের মতো সব গুণাবলী আমাদের দেশে উপস্থিত। আমরা শিশুদের জন্য বিষাক্ত খাদ্য চাই না। আমাদের কোনো ব্যবসায়ী কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে ভেজাল খাদ্য তৈরি করবেন তা আমরা চাই না। দ্রুত বড়লোক হবার নেশায় ভেজালে জড়াবেন না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব করতে পারে না। আমার দেশের যুব সমাজকে বিষাক্ত খাইয়ে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। এটা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইংরেজিতে একটা কথা আছে-হোয়াই মি? একে ধরেন, ওকে ধরেন, আমাকেও ধরেন, কিন্তু ওকে ধরেন না কেন। এমন কথা হরহামেশাই শুনছি। অথচ অধিকাংশ মানুষই সড়কে গিয়ে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছেন। প্রত্যেকে যদি স্ব স্ব উদ্যোগে চেষ্টা করেন তা হলে সব কিছু বদলানো সম্ভব।’

Advertisement

র‌্যাব কখনো রেভিনিউয়ের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে না উল্লেখ করে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘র‌্যাব জরিমানা করে কোনো ফায়দা পায় না। আপনার জীবনটা, সন্তানের জীবনটা ও সুস্থ জাতি তৈরির জন্য র‌্যাব অভিযানে যায়। এ দায়িত্ব কিন্তু সবার।’

‘এবার ঈদুল ফিতরের আগে রমজানকে ঘিরে ৫ থেকে ৬শ’ কোটি টাকার ভেজাল খেজুর জব্দ ও ধ্বংস করেছে র‌্যাব ম্যাজিস্ট্রেট। এই খেজুর কিন্তু স্টোরেজেই আসেনি। যদি আসত তাহলে আরবি হরফে নতুন করে লেখা হতো। মেয়াদ টেম্পারিং করা হতো। বিক্রি হতো আর আমরাই খেতাম।’

তিনি বলেন, ‘হজ করবে মানুষ সেখানেও ভেজাল। দেড়শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে এই টাকা হাতিয়ে নিতে একটি চক্র জোটবদ্ধ হয়েছিল। সেখানে র‌্যাব গেছে। জরিমানা করেছে, বন্ধ করেছে। প্রান্তিক জনগণের নিরীহ মানুষের পকেট কেটে কিছু মানুষ টাকা নিয়ে যাবে আমরা তামাশা দেখবো তা হবে না। ইনশাল্লাহ র‌্যাব এবার আরও কার্যকরী উদ্যোগ নেবে।’

কবি সুকান্ত ভেজাল নিয়ে কবিতা লিখেছেন জানিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে ভেজাল তখনো ছিল। এখনো আছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে তখন ভেজালটা মেনে নেয়া হতো এখন ভেজাল কেউ মেনে নিচ্ছেন না।’

Advertisement

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সেখানে আচরণগত কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে বেনজির আহমেদ বলেন, ‘গেল, অভিযান করল, জরিমানা করে শেষ-এমনটা হওয়া উচিত না। আবার সবকিছু আবিষ্কার করার দরকার আছে বলেও আমি মনে করি না। বরং আমরা কমন অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ করতে পারি।’

সুপারস্টোর কর্তৃপক্ষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই খাদ্যের প্রতিটি স্তরে ভেজাল হচ্ছে, জালিয়াতি হচ্ছে, বিষাক্ত খাবার বিক্রি ও খাওয়ানো হচ্ছে। আমি বিনীত অনুরোধ জানাব, আমাদের দেশকে বিষাক্ত খাবার খাওয়াবেন না। বিদেশ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ বিষাক্ত খাবার আমদানি করবেন না।’

আমে ফরমালিন প্রসঙ্গে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘আমে ফরমালিন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অনেক কথা আমাকে শুনতে হয়েছে। এখন কিন্তু আম পচছে। ফরমালিনবিরোধী মুভমেন্টের কারণে আজ অনেক পরিবর্তন এসেছে। কখন কোন আম নামানো যাবে তা আগেই জানানো হচ্ছে। সঠিক সময়ে আম বিক্রি হচ্ছে। এবার অন্যান্য বারের চেয়ে অপরিপক্ক আম কম মিলেছে বাজারে।’

‘আমাদের চোখে ধুলা দিয়ে ফরমালিনটাকে জায়েজ করার চেষ্টা চলেছে। মাছেও ফরমালিন দেয়া হচ্ছিল। ধরা পড়ার ভয়ে মাছে ফরমালিন দেয়া বাদ দিয়ে বরফে ফরমালিন ব্যবহার করার প্রমাণও পেয়েছি।’

র‌্যাব ডিজি বলেন, ‘আসলে জেল দিয়ে জরিমানা করে পরিবর্তন করা সম্ভব নয় সচেতনতা দরকার, পরিবর্তনের মানসিকতা দরকার। আমাদের যে সীমাবদ্ধতা আছে তা পূরণের চেষ্টা থাকা দরকার। কারণ এই দেশটা আমাদের। সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে।’

বাংলাদেশে কমার্শিয়াল ফার্মিং হবে জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এখন কৃষিখাতে শ্রমিকের মজুরি পড়ছে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করাতে পারবেন না সেখানে আবার আধাঘণ্টার লাঞ্চ ব্রেক আছে। কৃষিকে আর আগের মতো চিন্তা করলে চলবে না। কমার্শিয়ালি দেখতে হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উদ্যোগী হতে হবে।’

জেইউ/এসআর/জেআইএম