বিশেষ প্রতিবেদন

গ্রন্থাগারের অনুমোদন নিয়ে টিএসসি হলো পাঁচতলা!

রংপুর বিভাগের একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। ১৯৯৯ সালে যাত্রার পর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও অবকাঠামোগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরবর্তীতে এর উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

Advertisement

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় সরকার।

আরও পড়ুন >> ‘বিল চান না’ ঠিকাদার, তাই অগ্রগতি শূন্য

অনুমোদন অনুযায়ী, প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুরু থেকে গত মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ বাস্তবায়নকাল তিন বছর পার হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি কেবল ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, প্রকল্পে বেশকিছু অনিয়মও চিহ্নিত করা হয়েছে আইএমইডির ওই প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়, ‘ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুসরণ করা হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. মুস্তাফিজার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে একটু প্রবলেম (সমস্যা) হয়েছিল। সবগুলো ভবনেই ডিপিপি অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু একটা জায়গায় এটা অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি। সেটা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কথা ছিল। কিন্তু গ্রন্থাগারের ফাউন্ডেশন ঠিকমতো ছিল না (অর্থাৎ আগে এ ভবন নির্মাণেও অনিয়ম হয়েছিল)। তখন আমরা গ্রন্থাগারের পাশের টিএসসির ভবনটা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করি।’

মুস্তাফিজার রহমান আরও জানান, বর্তমান গ্রন্থাগার তিনতলা, ডিপিপি অনুযায়ী আরও দুইতলা করে পাঁচতলা করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। টিএসসি তিনতলা ছিল, এটা পাঁচতলার পরিকল্পনা ছিল না, কিন্তু তা করা হয়েছে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

এখনও বাকি যেসব কাজ

Advertisement

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষ উন্নয়নে অনেক কাজের অনুমোদন দেয়া হয়। মাত্র ছয় মাস পর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও বাকি রয়েছে অনেক কাজ।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মুস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় আমাদের চারটা কাজ এখনও বাকি। সেগুলোর একটি হলো ইউটিলিটি ভবন, এটা করা হবে পাঁচতলা। ইতোমধ্যে এর দোতলা করা হয়েছে। মেডিকেল বর্ধিতকরণেরও টেন্ডার হয়েছে। কাজ শুরু হচ্ছে। আরেকটা হলো ছাত্রীদের হল। ওটার টেন্ডারও হয় কিন্তু সেই টেন্ডারে একটা সমস্যা হয়। পরে আবারও টেন্ডার হয়েছে। ছাত্রী হলটা পাঁচতলা হবে, এটাতে শুধু একটু সময় লাগবে। আরেকটা ১০তলা একাডেমিক ভবন করা হচ্ছে। এর তিনতলার ছাদের কাজ চলছে।’

আরও পড়ুন >> মূল পরিকল্পনায় ব্রডগেজ, নির্মাণ ডুয়েলগেজ!

‘প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য দেড় বছর সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেটা কমিয়ে এক বছর করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে যাচ্ছে’ বলেও জানান মুস্তাফিজার রহমান।

প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর পরও শেষ করা সম্ভব হবে কি না- জানতে চাইলে মুস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘দেড় বছর হলে সুবিধা হতো। এক বছর সময় পেলে একটু সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কন্ট্রাক্টররা...! ১০তলা ভবনটায় একটু সময় লাগবে।’

দেরি যে কারণে

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়নের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আইএমইডির পর্যবেক্ষণে প্রকল্পটিকে ‘ধীর অগ্রগতি সম্পন্ন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পূর্ণকালীন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মুস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘দেরির কারণ হলো, আমাদের প্রকল্পটা যখন পাস হয়, এর প্রথম ছয় মাস অর্থ বরাদ্দ হয়নি। এর পরের পাঁচ মাস আমাদের উপাচার্য ছিলেন না। উপাচার্য না থাকলে তো আর প্রকল্প চলে না। ওই দুই কারণে প্রথম এক বছর আমাদের কোনো কাজ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘২৬ মে আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সভা ছিল, আমিও ছিলাম। সেখানে আমরা এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বলছি। এক বছর মেয়াদ বাড়লে আমাদের পুরো কাজ হয়ে যাবে। আমাদের একটা কাজেরও টেন্ডার বাকি নেই। প্রতিটা কাজ চলছে। প্রায় সবই হয়ে গেছে, দু-তিনটা কাজ চলমান।’

উপাচার্য না থাকায় প্রকল্পের পরামর্শক সময়মতো নিয়োগ করা যায়নি বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক। তার মতে, বেশ পরে দেশীয় একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অনুসরণ করা হয়নি কর্মপরিকল্পনা

আইএমইডির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো কর্মপরিকল্পনা অনুসরণ করেননি।’

আরও পড়ুন >> এক ভুলে গচ্চা ৩০০ কোটি!

এ বিষয়ে মুস্তাফিজার রহমানের দাবি, ‘না, না। আপনাকে শুধু এটুকু বলব, কর্মপরিকল্পনায় আমরা শুধু ওটুকুই করতে পারিনি, যে সময়টুকু উপাচার্য মহোদয় ছিলেন না। বাকি সময় আমরা মোটামুটি কর্মপরিকল্পনা অনুসারেই কাজ করেছি।’

সাড়া নেই হাজী দানেশ প্রধানের

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের (ভিসি) দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ড. এম আবুল কাশেম। জাগো নিউজ থেকে উপাচার্যকে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি রিসিভ করেননি।

উপাচার্যকে না পেয়ে তার পিএস ও সেকশন অফিসার মো. শামসুজ্জোহা বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভিসি স্যার অপরিচিত নম্বরে কথা বলেন না। এ ক্ষেত্রে আপনি স্যারকে এসএমএস করে দেখতে পারেন।’

এরপর জাগো নিউজের পরিচয় দিয়ে, বিষয় উল্লেখ করে এসএমএস করার পরও কল রিসিভ করেননি হাজী দানেশের উপাচার্য। ফিরতি এসএমএস বা কলও করেননি উপাচার্য মহোদয়।

পিডি/এমএআর/পিআর