রাজনীতি

‘যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ গুম হতে পারে’

মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাতির গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত ও শিহরিত করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

Advertisement

বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, দেশ আজ মগ দস্যু ও ঠগীদের অভয়ারণ্য। মানুষের জীবনযাপন ও বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ঠগীদের ওপর। ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যদি ন্যূনতম মনোমালিন্য হয় তাহলে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো মানুষ অথবা পরিবারের সদস্য গুম হয়ে যেতে পারে। দেশে এখন কন্ট্রাক্ট গুম চলছে। প্রভাবশালীরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা গুমের দায়িত্বে আছে, তাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে প্রতিপক্ষকে অদৃশ্য করাচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারই সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাতির গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা গোটা জাতিকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এমনিতেই দেশব্যাপী গুম হওয়া পরিবারের হাহাকারে বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকেই যদি গুমের ন্যায় করুণ পরিণতির শিকার হতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপদে বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বনই থাকবে না। কতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও রাস্তায় নামতে হয়।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, গতকাল উচ্চ আদালত কথিত মানহানির অভিযোগে করা বানোয়াট দুই মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন। কারণ এই দুটি ভুয়া মামলা সরকারী দলের যে ব্যক্তি করেছে সে মামলাবাজ ও মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা করেই আনন্দ লাভ করে। তাকে সবাই চেনে ও জানে। যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে অসত্য এবং মামলারই যোগ্য নয়। তা কেবল প্রতিহিংসামূলক।

তার প্রমাণ হলো- গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত জামিন দিলে সেক্ষেত্রে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, কালবিলম্ব না করে সামনে আর দুটি বানোয়াট মামলায় দেশনেত্রীর জামিন নিশ্চিত হলে উচ্চতর আদালতের ওপর মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। উক্ত দুটি মামলায় নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করে সরকার বেগম জিয়াকে সাজা দিয়েছে। নিম্ন আদালতের সেই সাজার ওপর আপিল করা হলেও এখন পর্যন্ত তাকে জামিন দেয়া হয়নি। আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকলে বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া যেত না। আমরা আশা করব, উচ্চতর আদালত সকল চাপকে উপেক্ষা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন এবং জনগণের নেত্রী জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা আরও আশা করব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার আর কোনো কারসাজি করবে না, বাধা দিবে না।

এছাড়া গতকাল অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট গ্রহণে আওয়ামী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা ন্যাক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ২০টি উপজেলার প্রায় সবখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল দলীয় ক্যাডারের মতো। নৌকা প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যারা প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের ঠেকানোর জন্য মাঠে সক্রিয় ছিল পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাতে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। নৌকার প্রতীকে ভোট না দিলে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকিও দেয়া হয়।

তিনি বলেন, এই আওয়ামী জবরদস্তিমূলক শাসন দীর্ঘায়িত হতে থাকলে নির্বাচন শব্দটি থাকলেও সুষ্ঠু শব্দটি পরলোকেই অবস্থান করবে। ভোটার থাকলেও ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। নির্বাচন কমিশন ভোট তামাশার রঙ্গমঞ্চে প্রধান অভিনেতা হিসেবেই ভূমিকা পালন করবে।

Advertisement

কেএইচ/এমএসএইচ/পিআর