অর্থনীতি

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় থাকছে যত ভাতা

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এ বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৭ লাখে উন্নীত করতে চায় সরকার। এ জন্য গত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটে বাড়ানো হচ্ছে বরাদ্দ।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসন্ন বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৭ লাখে উন্নীত করা হবে। সামাজিক সুরক্ষা খাত অগ্রাধিকার পাবে। নতুন করে ১৩ লাখ দরিদ্র মানুষকে এ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হবে। বর্তমান বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সাড়ে ৭৪ লাখ মানুষ বিভিন্ন ভাতা পান।

গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তাসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাই হলো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) ১৪টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চিহ্নিত করেছে।

এসব কর্মসূচিতে আগামী বাজেটে কী পরিমাণ বরাদ্দ ও ভাতার নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

Advertisement

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতামুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী মাসিক ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ১২ হাজর টাকা করা হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা প্রতিমাসে সম্মানি ভাতা হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। উপকারভোগীর সংখ্যা অপরিবর্তীত রেখে ভাতার হার ২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া তাদেরকে উৎসব ভাতা হিসেবে ১০ হাজার টাকা, নববর্ষ ভাতা হিসেবে ২ হাজার টাকা এবং বিজয় দিবস ভাতা ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তীত রাখা হচ্ছে।

বয়স্ক ভাতাচলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ লাখ উপকারভোগী প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এ কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ২৪০ কোটি টাকা বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪৪ লাখে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

Advertisement

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাআগামী বাজেটে বয়স্ক ভাতাভোগী মতো এ ভাতারও পরিধি ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪ লাখ উপকারভোগী প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১৪ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৭ লাখে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতানতুন বাজেটে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ উপকারভোগী প্রতিমাসে ৭০০ টাকা হারে এ ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৫ লাখ ৫৪ হাজারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভাতার হার প্রতিমাসে ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমআগামী বাজেটে এ কার্যক্রমে ভাতাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯০ হাজার উপকারভোগী বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার্থী বিভিন্ন হারে এ ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১ লাখে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্টোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা : আগামী বাজেটে এ কর্মসূচিতে সহায়তাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ হাজার উপকারভোগী সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করে করা হচ্ছে ১৫০ কোটি টাকা। সহায়তাভোগীর সংখ্যাও দ্বিগুণ করে ৩০ হাজারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

চা শ্রমকিদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিআগামী বাজেটে এ প্রকল্পে উপকারভোগী ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ হাজার উপকারভোগী জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা। সহায়তাভোগীর সংখ্যাও বাড়িয়ে ৪০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ্রামীণ দুঃস্থ মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতাআগামী বাজেটে এ ভাতার আওতা ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ লাখ উপকারভোগী তিন বছর মেয়াদে প্রতিমাসে ৮০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৭২ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ সালে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ৭৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও ৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৭ লাখ ৭০ হাজারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মজীবী মাদার সহায়তা তহবিলআগামী বাজেটে তহবিলের আকার ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৫০ হাজার উপকারভোগী তিন বছর মেয়াদে প্রতিমাসে ৮০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ২৬৪ কোটি টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও বাড়িয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজারে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

ভিজিডি কার্যক্রমআগামী বাজেটে এ কার্যকমে তহবিলের আকার ও উপকারভোগীর সংখ্যা অপরিবর্তীত রাখা হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৪০ হাজার উপকারভোগী প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৭০ হাজার টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী একই রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমআগামী বাজেটে এ কার্যক্রমে তহবিলের আকার ও উপকারভোগীর সংখ্যা অপরিবর্তীত রাখা হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫১ উপকারভোগী দৈনিক ২০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী একই রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

খাদ্যবান্ধন কর্মসূচিআগামী বাজেটে এ কার্যক্রমে তহবিলের আকার ও উপকারভোগীর সংখ্যা অপরিবর্তীত রাখা হচ্ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ লাখ উপকারভোগী প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন (বছরে ৫ মাস)। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগী একই রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমচলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬১ হাজার ৫০০ উপকারভোগীকে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন হারে এ ভাতা দিচ্ছে সরকার। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০ কোটি ৩ লাখ টাকা। আগামী ২০১৯-২০ সালে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ৬৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। তবে শুধু বেদে জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা কমিয়ে ১০ হাজার নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ খাতের আওতায় ৭১ হাজার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসা হচ্ছে।

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমআগামী বাজেটে এ ভাতাভোগীরও সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৪৭ উপকারভোগীকে বিভিন্নভাবে ভাতা দিচ্ছে সরকার। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬৭ তে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমইউএইচ/আরএস/পিআর