খেলাধুলা

বোল্ট-আবহাওয়া আর ঘাসের উইকেটের বড় দাওয়াই ‘রিয়াদ’

প্রত্যাশা প্রবল হলে নাকি সংশয়-সন্দেহও বাড়ে। ছিল আগে থেকেই। নতুন করে বলার কিছু নেই যে, এবার অন্য যে কোনো বারের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পরিণত, অভিজ্ঞ দল। দীর্ঘদিন একসাথে খেলা ৬-৭ জন ক্রিকেটার আছেন দলটিতে। ব্যাটিংটা বেশ পরিপাটি। বোলি তত ধারালো-আক্রমণাত্মক না হলেও ব্যাটসম্যানরা লড়াকু পুঁজি গড়ে দিতে পারলে তাকে ডিফেন্ড করার মত বোলিং শক্তিটা আছে।

Advertisement

প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার প্রমাণও মিলেছে। ব্যাটসম্যানরা ৩৩০ রানের বড়-সড় পুঁজি গড়ে দিয়েছেন। বোলাররা তাকে জয়ের জন্য যথেষ্ঠ বলে প্রমাণ করেছেন। ওই ম্যাচের পর প্রত্যাশা বেড়েছে আরও। এখন মনে হচ্ছে, প্রোটিয়াদের যখন হারানো গেছে, তাহলে ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের বিপক্ষেও জেতা সম্ভব।

ইতিহাস, পরিসংখ্যান বেশ আশা জোগাচ্ছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আর ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বের ম্যাচের ঐতিহাসিক জয়- বাংলাদেশের আশার খোরাক, রসদ। আর ওই দুই খেলায় লড়াকু ও সংগ্রামী সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে কিউইদের বিপক্ষে বিশ্ব আসরে বড় নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপে জিততে না পারলেও হ্যামিল্টনে কিউইদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২৮৮ রানের সংগ্রামি পুজি গড়ে প্রায় সমানতালে লড়ে হেরেছিল ৩ উইকেটে। খেলা শেষ হয়েছিল সাত বল আগে। সফলতম বোলার ছিলেন সাকিব (৫৫ রানে ৪ উইকেট)। তামিম (১৩), সাকিব (২৩) ও মুশফিক (১৫) রান না পেলেও চার নম্বরে নেমে একা লড়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১২৩ বলে ১২ বাউন্ডারি এবং তিন ছক্কায় ১২৮)।

Advertisement

সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি ছিল সৌম্য সরকারের (৫৮ বলে ৫১)। নিচের দিকে সাব্বির রহমান রুম্মন ২৩ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে স্কোরবোর্ডটাকে করে দেন মোটাতাজা। আর ২০১৭ সালের ৯ জুন কার্ডিফে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডে ৫ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশের কাছে।

সাকিব আর মাহমুদউল্লাহর এক জুটিতেই গড়ে ওঠে ম্যাচের ভাগ্য। ২৬৫ রানের পিছু ধাওয়া করতে নেমে ধুঁকছিল মাশরাফির দল। ৩৩ রানে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন চার প্রতিষ্ঠিত ফ্রন্টলাইনার তামিম (০), সৌম্য (৩), সাব্বির (৮), মুশফিক (১৪)। ওই কঠিন চাপে ২২৪ রানের বিরাট জুটি গড়ে দলকে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ উপহার দিয়ে মহা নায়ক বনে যান মাহমুদউল্লাহ (১০৭ বলে অপরাজিত ১০২) আর সাকিব (১১৫ বলে ১১৪)।

কিন্তু তারপরও আছে সংশয়, সন্দেহ। ভয়-ডর আর শঙ্কাও না থাকলেও কারো কারো মনে একটা চাপা- অস্ফুট সংশয় আর খানিক দ্বিধাও আছে। কেউ কেউ একটু বেশিই চিন্তা করছেন। বলাবলিও করছেন, ‘আরে ভাই রাবাদা আর লুঙ্গির বলে গতি আছে। সুঠাম দেহী আর বাড়তি উচ্চতার ওই দুই প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার বেশ জোরে বল করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক কম। বলে কারুকাজ বা সুইং- যাই বলা হোক না কেন, সেটাও কম। বাড়তি গতি সঞ্চারের চেষ্টা করতে গিয়ে বাজে লাইন ও লেন্থেও বল ফেলেন বেশ।

সে তুলনায় নিউজিল্যান্ডের তিন ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি তিনজনের বলের নিয়ন্ত্রণ বেশি। তারা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে জায়গা দেন কম। লেন্থটা বেশ টাইট। আর বলে কাজ মানে সুইংও বেশি। তাদের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জটা কি একটু বেশি হবে না?

Advertisement

আজ দুপুরে ওপেনার সৌম্য সরকারও স্বদেশি সাংবাদিকদের কাছ থেকে এমন প্রশ্নই শুনলেন। সংশয়টা অমূলক নয়, সত্য। বিশেষ করে ট্রেন্ট বোল্টের বলে সুইং রাবাদা আর লুঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি। চিন্তটার মাত্রাটা আরও একটু বাড়িয়ে দিয়েছে ‘আবহাওয়া’। শুরুর পর থেকে বেশ রোদ ঝলমলে দিন কেটেছে গত কদিন। কিন্তু আজ ৪ জুন মঙ্গলবার লন্ডনে আকাশে দূর্যোগের ঘনঘটা।

সকালটা মোটামুটি কাটলেও দুপুর নামতেই রোদ গেছে হারিয়ে। সূর্য্যকে ঢেকে দিয়েছে কালো মেঘ। আর কনকনে বাতাসের সাথে আবার ইলশে গুড়ি বৃষ্টি। সব মিলে ‘সিমিং কন্ডিশন।’

আবহাওয়ার পূর্বাভাষও একটু চিন্তার কথাই শোনাচ্ছে। পূর্বাভাষে এমন আবহাওয়ায় বল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘোরে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে আজকের ম্যাচ যে পিচে হবার কথা, সে পিচে এবারের বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও হয়নি। ওই পিচে নাকি ঘাস আছে। উড়ো খবর নয়। খোদ বাংলাদেশ ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন আর নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন দিয়েছেন এ তথ্য। এমনিতেই বোল্ট কোয়ালিটি ফাস্ট বোলার। তারওপর আবহাওয়া আর ঘাসযুক্ত উইকেট- একটু হলেও চিন্তার উপাদান বৈকি।

এতটুকু পড়ে আবার ভাববেন না যে , নেতিবাচক চিন্তা আর কথা-বার্তা বলা হয়েছে শুধু। আশার কথাও আছে। ট্রেন্ট ব্রিজে বোল্ট যত উঁচু মানের ফাস্ট বোলার আর দারুন উইকেট শিকারীই হোন না কেন- বাংলাদেশেরও শক্তি-সম্ভাবনার ভাল জায়গা আছে।

ভুলে গেলে চলবে না, এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ আর ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একজোড়া সেঞ্চুরি আছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের।

আজকের এই ম্যাচের আগে তাই ঘুরেফিরে রিয়াদের কথাই উঠছে। বলা হচ্ছে, ভয়-ডরের কি আছে? কিউইদের ট্রেন্ট বোল্ট থাকলে বাংলাদেশেরওতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছে। ওই দুইয়ের মোকাবিলায় বোল্ট একবারের জন্য পাঁচ উইকেট বহুদুরে, ৪ উইকেটের দেখাও পাননি। কিন্তু রিয়াদ দু’বারই শতরান করে দেখিয়েছেন। কাজেই বোল্ট ছাপিয়ে রিয়াদ যে অনেক বেশি উজ্জ্বল।

সেটা বড় দাওয়াও বটে। বৈরী আবহাওয়া আর ঘাসযুক্ত উইকেটে ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে তাই অযথা চিন্তা কিছু নেই। বাংলাদেশেরও আছে রিয়াদ নামের এক সাহসী যোদ্ধা। কে জানে কালকের ম্যাচও হতে পারে তারই।

বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটা বড় অংশের প্রত্যাশা ছিল, এমন ম্যাচের আগে রিয়াদ আসবে প্রেস মিটে। কিন্তু তিনি আসেননি। জানা গেছে, রিয়াদ নিজেই আসতে চাননি।

কেন প্রেস মিটে আসলেন না তিনি? তবে কি কিউইদের বিপক্ষে আবারও ম্যাচ জেতানো পারফরম করতে মুখিয়ে আছেন রিয়াদ? এ কারণেই ম্যাচের আগে প্রচার মাধ্যমকে সুকৌশলে এড়িয়ে চলা। কে জানে আগামীকাল বিজয়ীর বেশেই হয়ত সাজঘরে আসবেন রিয়াদ?

এআরবি/আইএইচএস/এমআরএম/পিআর