জাতীয়

ফলে হাত দিতে মধ্যবিত্তদের মানা!

ভাই আঙ্গুর কত? লাল পাঁচশ’, সাদা ২৮০ টাকা কেজি। আপেল কত? যেটাই নেন ২২০ টাকা কেজি। মাল্টা? একদাম ২০০ টাকা কেজি। আনার? ২৮০ টাকা। নাট ফল? ২২০ টাকা কেজি। ফলের এত দাম? আরে ভাই নিলে নেন, না নিলে এভাবে হাত দিয়ে ধরবেন না।

Advertisement

গল্পের মতো শোনালেও এটি বাস্তব ঘটনা। সোমবার সকালে রামপুরা বাজারে এ প্রতিবেদকের সামনেই এক ফল ব্যবসায়ী ও দোকানে ফল কিনতে আসা এক ব্যক্তির মধ্যে এমনই কথোপকথন হয়। ব্যবসায়ীর কাছে বিভিন্ন ফলের দাম শুনে এক পর্যায়ে না কিনেই অন্যদিকে যাত্রা শুরু করেন ওই ব্যক্তি।

কাছে গিয়ে কথা বললে নিজেকে ময়নুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাই আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষের পক্ষে এখন ফল কিনে খাওয়া সম্ভব না। ছেলেমেয়ের আবদার পূরণ করতে বাসায় ফল কিনে নিয়ে যাব সে উপায় নেই। সব ফলের দাম আকাশচুম্বি। কেনা তো দূরের কথা অবস্থা এমন দাঁড়িযেছে আমাদের জন্য ফলে হাত দেয়া মানা!’

তিনি জানান, মতিঝিলের বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রামপুরার ওয়াপদা রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া একমাত্র ছেলের আবদার পূরণ করতে এসেছিলেন ফল কিনতে। কিন্তু যে দোকানেই যাচ্ছেন ফলের দাম শুনে হতাশ হচ্ছেন।

Advertisement

শুধু ময়নুল ইসলাম নয়, সম্প্রতি বিভিন্ন ফলের যে দাম বেড়েছে তাতে ফল কিনতে গিয়ে অনেকেই হতাশ হচ্ছেন। আমদানি করা আঙ্গুর, আপেল, মাল্টা, আনার, নাট ফলের পাশাপাশি বাজারে নতুন আসা দেশি ফল লিচু ও আমের দামও আকাশচুম্বি। এক কথায় ফলের দাম এখন অনেকটাই নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আসা ভালো মানের লিচু ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা করে। তবে নিম্ন মানের ছোট লিচু কোথাও কোথাও ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে। আর আম বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে।

আম, লিচুর পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কলা, পেঁপে ও পেয়ারা। চাপা কলার হালি বাজার ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সবরি কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।

এদিকে আমদানি করা ফলের মধ্যে লাল আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। সাদা আঙ্গুর মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। আপেল ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, মাল্টা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, আনার ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা, নাট ফল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

রামপুরা মোল্লাবাড়ি বাজারে এক মাকে মেয়ের আবদার পূরণ করতে একটি আপেল কিনতে দেখা যায়। ব্যবসায়ী সেই আপেলটি ডিজিটাল পাল্লায় ওজন করে দাম নেন ৩৫ টাকা।

ফাতেমা খাতুন নামের ওই গৃহিণী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাঁচাবাজারে এসেছিলাম। ফলের দোকান দেখে মেয়ে আপেল খাওয়ার আবদার করল। আপেলের যে দাম তাতে আমাদের পক্ষে তো আধাকেজি-এককেজি কেনা সম্ভব না। তাই একটি আপেল কিনলাম। ওজন করে ব্যবসায়ী দাম নিল ৩৫ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘আপেলের এত দাম আগে কখনও দেখিনি। রোজার আগেও ১৪০ টাকা কেজি আপেল বিক্রি হতে দেখেছি। কিন্তু এখন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শুধু আপেল না, সব ধরনের ফলের দাম অনেক বেশি। আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে ফল কিনে খাওয়া অনেকটাই বিলাসিতা করার মতো।’

রামপুরা বাজারের ফল ব্যবসায়ী মো. মাসুম বলেন, ‘বাদামতলীর আড়তে এখন সব ধরনের ফলের দাম চড়া। মাল্টার দাম গতকালের তুলনায় আজ কার্টনে বাড়ছে ২০০ টাকা। রোজার এক সপ্তাহ আগে থেকে এভাবে প্রায় প্রতিদিনই ফলের দাম বাড়ছে। তবে লাল আঙ্গুরের দাম কিছুটা কমেছে। রোজার আগে লাল আঙ্গুর ৫২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন ৪৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’

সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, ‘রোজার আগের তুলনায় লাল আঙ্গুর ও আমের দাম কিছুটা কমেছে। রোজার আগে আম ছিল ২৫০ টাকা কেজি, এখন কমে ১৮০ টাকা হয়েছে। তবে সাদা আঙ্গুরসহ অন্য ফলের দাম অনেক বেড়েছে। রোজার আগে যে মাল্টা ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, তা এখন ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। ১৪০ টাকার নাট ফল ২২০ টাকা হয়েছে। ২২০ টাকার সাদা লম্বা আঙ্গুর ৩০০ টাকা হয়েছে। এভাবে প্রায় সব ফলের দামই বেড়েছে। আড়তে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

এমএএস/এনডিএস/পিআর