জাতীয়

লাবণ্যের রক্তমাখা মুখ ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে

কারও মুখে যেন কথা নেই। মুখবুঝে থাকলেও কষ্ট স্পষ্ট। সদা হাস্যোজ্জ্বল লাবণ্যের শরীর লাল হয়েছে রক্তে। মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের কাছেই মারা গেছেন লাবণ্য।

Advertisement

ফাহমিদা হক লাবণ্য (২১) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিএসই) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সকাল সাড়ে ১০টায় বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। উবার মোটোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রওনা দিয়েছিলেন তিনি।

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে বেলা ১১টার দিকে একটি কাভার্ডভ্যান পাশ থেকে সজোরে ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন লাবণ্য। আহত অবস্থায় তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মাথার পেছনে গুরুতর জখম হয়েছিল তার। মাথা ফেটে রক্ত জমেছিল সড়কেও। পরে তার মরদেহ নেয়া হয় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাবণ্যের বাবার ইমদাদুল হক, পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। মা ফারজানা। শ্যামলীর ৩ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন লাবণ্য। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় লাবণ্য। ছোট ভাইয়ের নাম ফারহানুল হক মৃদুল।

Advertisement

লাবণ্যের আহত হওয়ার খবরও পাননি স্বজনরা। খবর যখন পেয়েছেন ততক্ষণে লাবণ্যের নিথর শরীর ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সেখানেই ছুটে আসে পরিবার ও স্বজনরা। খবর পাওয়ার পর মর্গে ভিড় করেন সহপাঠী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও।

বিকেল থেকে বন্ধু ও সহপাঠীরা মর্গের সামনে এসে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালক দুজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সেখানেই কথা হয়, ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরমানের সঙ্গে। আরমান বলেন, সদা হাস্যোজ্জ্বল লাবণ্যের মৃত্যু স্বাভাবিক কোনো মানুষ মেনে নিতে পারবে না। অন্যান্য দিনের মতো আজও লাবণ্যের আসার কথা ছিল ক্যাম্পাসে। প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে আজও দেখা হলো, তবে ও ওপারে, আর আমরা এপারে। লাবণ্যের রক্তমাখা মুখটি ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। ওর মৃত্যু হয়নি ওকে হত্যা করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান তিনি।

কথা বলার চেষ্টা করা হলে ছোট ভাই ফারহানুল হক মৃদুল বলেন, ভাষা নেই, কী বলব! ভাইয়ের সামনে বোনের লাশ! আপুর কাছে আমি ছিলাম আদরের। ভাবছি আমাকে ওমন করে আর কে বাসবে ভালো! মুখবুঝে কান্না চেপে বসেন পড়েন মৃদুল।

Advertisement

রাত ৯টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর শ্যামলী শিশুপল্লী জামে মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে সাভারে নানাবাড়ি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হবে।

অন্যদিকে লাবণ্যের মোবাইলফোনের সূত্র ধরে পুলিশ জানিয়েছে, লাবণ্যের উবার মোটোর চালকের নাম সুমন। একই ঘটনায় চালক সুমন আহত হলেও পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর থেকে সে পলাতক তিনি। আশেপাশের ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘাতক সেই কাভার্ডভ্যানটি শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।

জেইউ/বিএ