দেশীয় চলচ্চিত্র ও নাটকে অনেকেই রয়েছেন যারা অভিনয়ে তারকা খ্যাতি নিয়ে পরিচালনায় এসেছেন। নামও করেছেন। তাদের তালিকায় সবার আগে উচ্চারণ করা যায় সব্যসাচী খান আতার নাম। ১৯৫৯ সালে তিনি সিনেমার অভিনয়ে যাত্রা করেন। তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অনেক দিনের চেনা’ মুক্তি পায় ১৯৬৩ সালে।
Advertisement
১৯৬৭ সালে তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবনী নিয়ে নির্মাণ করেন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা’। চলচ্চিত্রটি ১৯৬৯ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে গোল্ডেন প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়।
এরপর তিনি নির্মাণ করেন ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘জোয়ার ভাটা’। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। ১৯৭৫ সালে প্রমোদ কর ছদ্মনামে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মাণ করেন রোমান্টিক চলচ্চিত্র ‘সুজন সখী’। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত হন।
আশির দশকে নির্মাণ করেন ‘হিসাব নিকাশ’ এবং ‘পরশপাথর’ নামের দুটি ছবি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৪ সালে তিনি ‘এখনো অনেক রাত’ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে ছবির কাজ শেষ হয়। কিন্তু সেন্সর বোর্ড ছবির সাতটি স্থানে দৃশ্য কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি।
Advertisement
তিনি বাংলার কবি জসীমউদদীন, গঙ্গা আমার গঙ্গা, গানের পাখি আব্বাস উদ্দিনসহ বেশকিছু তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন।
নন্দিত নির্মাতা হিসেবে স্বীকৃত সুভাষ দত্ত। তবে পরিচালনারও আগে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন। এহতেশামের ‘এ দেশ তোমার আমার’ ও মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ ছবিতে তার দেখা মেলে।
১৯৬৩ সালের মে মাসে তিনি নির্মাণ শুরু করেন ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রটি এবং ১৯৬৪ সালে এটি মুক্তি দেন। ১৯৬৮ সালে জহুরুল হক ও প্রশান্ত নিয়োগির লেখা কাহিনি নিয়ে ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন সুভাষ দত্ত এবং ছবির একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭৭ সালে আলাউদ্দিন আল আজাদের বিখ্যাত উপন্যাস '২৩ নম্বর তৈলচিত্র' অবলম্বনে ‘বসুন্ধরা’, ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা গল্প ‘গলির ধারের ছেলেটি’ অবলম্বনে ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে কালজয়ী হয়ে আছেন।
বাংলাদেশের অভিনয় জগতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নাম সৈয়দ হাসান ইমাম। ১৯৬৫ সালে সমগ্র পাকিস্তানের চলচ্চিত্র উৎসবে হাসান ইমাম শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান লাভ করেন খান আতাউর রহমানের অনেক দিনের চেনা ছবিতে অভিনয়ের জন্য।
Advertisement
এই অভিনেতাও নির্মাণে মুখ উজ্জ্বল করেছেন বাংলা চলচ্চিত্র। ১৯৭২ সালে তিনি পরিচালনা করেন ‘লালন ফকির’ নামের চলচ্চিত্র। এতে কবরী ও সুজাতার সঙ্গে অভিনয় করেন উজ্জ্বল। আরও ছিলেন আনোয়ার হোসেন, সুমিতা দেবী, শওকত আকবর। ছবিটি পরিচালনা করে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পুরস্কারও পান তিনি। এছাড়া অর্ধশতাধিক টিভি নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।
এ তালিকায় সম্মানের সাথে আসবে চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল রানার নাম। শোনা যায় সোহেল রানা ও মাসুদ পারভেজ নামে অর্ধশতাধিক সিনেমা পরিচালনা করেছেন তিনি। পরিচালক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মাসুদ রানা’ ছবি দিয়ে। সেই ছবিতে তিনি নিজে অভিনয়ও করেছিলেন নাম ভূমিকায়, কবরী ও অলিভিয়ার বিপরীতে। এরপর ‘এপার ওপার’সহ বহু চলচ্চিত্রেই তার নির্মাণের মুন্সিয়ানা দেখেছে ঢাকাই সিনেমার দর্শক।
১৯৭৭ সালে ‘অনন্ত প্রেম’ ছবি দিয়ে পরিচালনায় নাম লেখান নায়করাজ রাজ্জাক। এরপর ‘চাপাডাঙ্গার বউ’, ‘জ্বীনের বাদশা’ ১৯৮৯, ‘প্রফেসর’ (১৯৯২), ‘বাবা কেন চাকর’ (১৯৯৭), ‘উত্তর ফাল্গুনী’ (১৯৯৭) নির্মাণ করেন। তার মধ্যে ‘বাবা কেন চাকর’ ছবিতে রাজ্জাক বাবার চরিত্রে অভিনয়ও করেন। তার দুই সন্তান চরিত্রে অভিনয় করেন আবুল কাশেম মিঠুন এবং বাপ্পারাজ। নায়করাজের সর্বশেষ পরিচালিত ছবি ‘আয়না কাহিনি’। এটি মুক্তি পায় ২০১৪ সালে।
এরপর চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসেন নায়ক আলমগীর। নায়ক হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৮৫ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘নিষ্পাপ’ ছবিটি। এরপর ‘নির্মম’, ‘বৌমা’, ‘মায়ের দোয়া’ ও ‘মায়ের আর্শীবাদ’ নামের ছবিগুলো দিয়ে পরিচালক হিসেবে সফল হন এই অভিনেতা।
সর্বশেষ আলমগীর পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’ মুক্তি পায় ২০১৮ সালে। ছবিটি তেমন সাফল্য না পেলেও এর গল্প ও নির্মাণ প্রশংসিত হয়েছে।
পরিচালনায় সুনাম কুড়িয়েছেন প্রয়াত অভিনেতা বুলবুল আহমেদও। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত ছবির শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে বুলবুল আহমেদ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন তিনি। নাটক নির্মাণেও বুলবুল আহমেদ প্রশংসিত ছিলেন। তার পরিচালিত অন্যতম প্যাকেজ নাটকগুলো হলো- 'মেঘে ঢাকা আকাশ', 'তুমি কি সেই তুমি', 'একটি প্রেমের জন্য', 'মন ছুঁয়ে যায়', 'চিরকুট', 'অনামিকা', 'অন্য মনে', 'পলাতক সে', 'অকারণে অবেলায়', 'বিলেতি বিলাস', 'নীলা নামের মেয়েটি', 'তৃতীয় পক্ষ', 'একা', 'এক ঝলক আলো', 'জীবন নদীর জোয়ার ভাটা', 'ঝরা পাতা', 'মানুষজন', 'আরাধনা', 'কোন গগনের তারা', 'ঋতু গৃহ', 'বৃষ্টি', 'চলে যায় বসন্তের দিন', 'ওরা তিনজন', 'ইয়ে নিয়ে বিয়ে', 'সুভা', 'একজন পৃথিলার কথা' ইত্যাদি।
বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। তিনিও ২০০৯ সালে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার পরিচালনায় ‘এবাদত’ ছবিটিতে শাবনূর-রিয়াজ জুটির অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন ছবির পরিচালনায় আর দেখা মিলেনি তার। তবে গেল বছরের শেষ দিকে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এখন বলা যায়’ নামের একটি ছবি তিনি পরিচালনা করবেন।
ঢাকাই সিনেমার নন্দিত অভিনেত্রী সুচন্দা। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসিত হন তিনি। রিয়াজ ও শশী জুটির এই সিনেমার পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান সুচন্দা।
কবরীর প্রথম পরিচালিত ছবি ‘আয়না’। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি কয়েকটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। এরপর তিনি নাটক নির্মাণে হাত দেন।
সুজাতা একটি মাত্র চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ‘অর্পন’। এতে নায়ক রাজ্জাক অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন শাখায় একাধিক জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
অভিনয় আর প্রযোজনার পাশাপাশি প্রয়াত অভিনেত্রী রোজী আফসারীও একটি চলচ্চিত্রও তৈরি করেন। ১৯৮৬ সালে তার পরিচালিত ছবি ‘আশা নিরাশা’ মুক্তি পায়।
অভিনেত্রী জাহানারা ভুঁইয়া শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি ‘সিঁদুর নিও না মুছে’ ছবিটি নির্মাণ করেছেন।
পরিচালনাতে হিট ছবি উপহার দেয়া আরেক তারকার নাম রুবেল। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিচ্ছু বাহিনী’। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবি একটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পায়। সেইসঙ্গে বছরের সেরা ছবি হিসেবেও বিবেচিত হয় এটি।
একই বছরে মুক্তি পাওয়া ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’ ছবিটিও পরিচালনা করেন রুবেল। পরবর্তীতে তিনি প্রবেশ নিষেধ, অন্ধকারে চিতা, খুনের পরিণাম, বাঘে বাঘে লড়াই, টর্নেডো কামাল, বিষাক্ত চোখ, রক্ত পিপাসা, সিটি রংবাজ, চারিদিকে অন্ধকারসহ ১৭টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন।
২০০৩ সালে কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি দিয়ে মৌসুমী চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে পরিচালনা করেন মেহের নিগার। ২০১৬ সালে ‘শূন্য হৃদয়’ নামে একটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করছেন।
এছাড়াও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়ে সিনেমা-নাটক নির্মাণে এসেছেন অভিনেতা উজ্জ্বল, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, বাপ্পারাজসহ আরও বেশ ক’জন তারকা।
অন্যদিকে ছোট পর্দায় অভিনয়ে জনপ্রিয়তা পেয়ে নির্মাণে এসে সফল হওয়াদের তালিকাও বেশ লম্বা। তাদের মধ্যে আবুল হায়াতের নাম উল্লেখ্য। মঞ্চ থেকে টিভির অভিনয়ে এসে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। এরপর ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করেন প্রথম নাটক ‘হারজিত’। সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন তার মেয়ে বিপাশা ও জামাতা তৌকীর আহমেদ। এরপর বেলি, প্রত্যাশা, ও একজন অপরাধিনী, আপোষসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। ‘দোলা ও হাসুলি’ নামের একটি ধারাবাহিকও নির্মাণ করেছেন তিনি।
বরেণ্য অভিনয়শিল্পী আফজাল হোসেনের নির্মাণও মুগ্ধ করেছে এদেশের দর্শকদের। প্যাকেজ নাটকের পাশাপাশি ধারাবাহিকও তিনি নির্মাণ করেছেন। ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ছোটকাকু’ সিরিজ নিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ চলমান তার। তবে আফজাল হোসেন এ দেশের বিজ্ঞাপন নির্মাণে নির্ভরতা ও জনপ্রিয় এক নাম।
বহুদিন ধরে শহীদুজ্জামান সেলিমও নাটক নির্মাণ করছেন। তার সর্বশেষ ধারাবাহিক ‘একঝাঁক মৃত জোনাকী’।
অভিনেতা তৌকীর আহমেদ বর্তমানে অভিনয়ের চেয়ে নির্মাণেই বেশি মনোযোগী। এই অভিনেতার নির্মিত প্রথম টিভি নাটক হলো ‘তোমার বসন্ত দিনে’। ২০০৪ সালে ‘জয়যাত্রা’র মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। এরপর একে একে নির্মাণ করেছেন ‘রূপকথার গল্প’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘হালদা’ ও সর্বশেষ ‘ফাগুন হাওয়ায়’।
অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ তো পুরোদস্তুর নির্মাতা। তিনি ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’ নামের একটি সিনেমাও নির্মাণ করেছেন। তবে তিনি এখন রিয়েলিটি শোগুলো পরিচালনা করেন। সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের দুটি প্রগ্রাম পরিচালনা করেছেন তানিয়া।
অভিনয় ছেড়ে আফসানা মিমিও বহু আগে ক্যামেরার পেছনে কাজ শুরু করেছেন। প্যাকেজ , ধারাবাহিক দু- ধরনের নাটকই তিনি নির্মাণ করেছেন। মিমি ২০০০ সালে ধারাবাহিক নাটক ‘বন্ধন’ দিয়ে পরিচালনায় আসেন এবং তার সেই নাটক দর্শকপ্রিয় হয়। একুশে টিভিতে প্রচারিত ‘বন্ধন’ ধারাবাহিকটি মিডিয়ায় তৈরি করে দীর্ঘ ধারাবাহিক নির্মাণের ট্রেন্ড। আফসানা মিমি এরপর একে একে নির্মাণ করেন দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘গৃহগল্প’,‘সাড়ে তিনতলা’,‘কাছের মানুষ’ ও ‘ডলস হাউস’ এর মত নাটক। তার প্রতিটি ধারাবাহিকই বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সিনেমা নির্মাণেও হাত দিয়েছিলেন। যদিও শেষমেষ তা আলোর মুখ দেখেনি।
১৯৮১ সালে ‘নোঙর’ শিরোনামের একটি নাটকের মধ্য দিয়ে টিভি পর্দায় আসেন আজিজুল হাকিম। পরে নির্মাণেও দারুণ দক্ষতা প্রমাণ করেন। তার নির্মিত ‘যা হারিয়ে যায়’ ও ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ নাটক দুটি দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলে। এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি নাটক নির্মাণ করেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান এখনো নিয়মিত অভিনয় করছেন। একইসঙ্গে নির্মাণও করছেন তিনি। তার পরিচালিত প্রথম মেগা ধারাবাহিক হলো ‘লাল নীল বেগুনি’ তুুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার বেশিরভাগ নাটকই কমেডি ধাঁচের।
অভিনয়ের পাশাপাশি নাট্য নির্মাণেও জনপ্রিয় গাজী রাকায়েত। বহু নাটক-টেলিছবিতে তিনি দর্শক মুগ্ধ করেছেন। পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেছেন তিনি। তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো হল ঘুণ (২০০৪) এবং জীবনমৃত (২০০৫)।
২০১৩ সালে তার নিজের রচনায় নির্মাণ করেন প্রথম চলচ্চিত্র ‘মৃত্তিকা মায়া’। চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ রেকর্ড ১৭টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। গাজী রাকায়েত তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র গোর-এর চিত্রনাট্যের কাজ করছেন।
অভিনয় দিয়ে শুরু করলেও অভিনেতা হিসেবে তেমন সাড়া পাননি। তবে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে, লাভলু আট থেকে নয়টি খণ্ড নাটক পরিচালনা করেন। এর মধ্যে দ্বিচক্রযান (১৯৯৭),গহরগাছি (১৯৯৭),একজন আয়নাল লস্কর (১৯৯৯),আধুলী (২০০২) এবং ঘর (২০০২) তাকে সফল নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
২০০৪ সাল থেকে, লাভলু অনেক ধরনের ধারাবাহিক টেলিভিশন নাটকে পরিচালনা এবং অভিনয় করেছেন। রঙের মানুষ (২০০৪) তার পরিচালিত প্রথম ধারাবাহিক। এই নাটকের সফলতার পর, তিনি আরো কিছু ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেন। এর মধ্যে অন্যতম দুইটি হলো ভবের হাট (২০০৭) এবং ঘর কুটুম (২০০৮)।
চিত্রনায়ক রিয়াজের সঙ্গে দুই নন্দিত নায়িকা শাবনূর ও মৌসুমীকে নিয়ে তিনি ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে এই ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্যের অনেক রেকর্ডই নতুন করে গড়েছে।
অভিনেতা মাহফুজ আহমেদও অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনায় দারুণ সমাদৃত হয়েছেন। তার পরিচালিত প্রথম নাটক ‘তাহারা’। এরপর ‘আমাদের নুরুল হুদা’ ধারাবাহিক নাটকটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন তিনি। পরে ‘তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা’, ‘চৈতা পাগল’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি। ২৫টির বেশি প্যাকেজ নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।
জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বিরও এই সময়ে অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণ করছেন। তার পরিচালিত প্রথম ধারাবাহিক হলো ‘মকবুল’। তার নির্মিত ‘নোয়াশাল’ ধারাবাহিকটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে নিয়মিতই তাকে দেখা যায় নাটক পরিচালনা করতে।
অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনও নাটক নির্মাণে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ নামের একটি ছবিও নির্মাণ করেছেন। রিয়াজ, মাহি ও ফেরদৌস অভিনীত সেই ছবিটি দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছে।
জনপ্রিয় অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়ও পরিচালনাতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ২০১১ সালে ‘গলির মোড়ে সিডির দোকান’ নামের নাটক দিয়ে তার টেলিভিশন নাটক পরিচালনায় অভিষেক হয়। এরপর বেশ কিছু নাটক তিনি পরিচালনা করেছেন।
২০১৫ সালে জয়ের চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হয়। তার নিজের রচিত ও পরিচালিত প্রার্থনা চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। শুরুতে এর নাম রাখা হয়েছিল ‘আমরা যারা বাবা-মা’। পরে তা পরিবর্তন করে ‘প্রার্থনা’ রাখা হয়। তার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অর্পিতা’ মুক্তি পায় গেল বছরের ডিসেম্বরে। তিনি তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘পাপ কাহিনী’র ঘোষণা দিয়ে তার নির্মাণ কাজও শুরু করেছেন।
কমেডি নাটকের দর্শকপ্রিয় অভিনেতা শামিম জামান। তিনিও নিয়মিত অভিনয়ের পাশাপাশি একক ও ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন। তার হাতে বর্তমানে তিনটি ধারাবাহিক রয়েছে। এগুলো হলো ‘চাটামঘর’, ‘মকো মালয়েশিয়া’ ও ‘অল রাউন্ডার’।
সুবর্ণা মুস্তাফা, বিপাশা হায়াত, তারিনের মতো তারকাদেরও নির্মাণে দেখা গেছে। তারা প্রশংসিত নাটক উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও রওনক হাসান, নাজনিন চুমকি প্রমুখ তারকারা নিয়মিতই নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করে চলেছেন।
এদিকে সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েও নিরব হয়ে আছেন চলচ্চিত্র নায়িকা শাবনূর ও চলচ্চিত্রের তারকা দম্পতি নাঈম-শাবনাজ।
এলএ/এমএস