ফিচার

সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

কেউ প্রতিবন্ধি, কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। ওদের আশ্রয় সরকারি আশ্রম। এমন সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে কেটেছে একটি দিন। গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দিনটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন আমেজের। দেশের বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীর আগমনে পার্কটি মুখরিত থাকলেও দিনটি ছিল শুধুই অনাথ শিশু-কিশোরের। ১ হাজারেরও বেশি অনাথ শিশু-কিশোর আনন্দ, হাসি আর উল্লাসে মেতে ওঠে। এমনকী বিনা পয়সায় পার্কের সব ইভেন্ট ঘুরে দেখার সুযোগ পায়।

Advertisement

গত ৩০ মার্চ (শনিবার) সকাল থেকেই সমাজসেবা অধিদফতরের আয়োজনে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ২৯টি সরকারি আশ্রমের সহস্রাধিক শিশুর উল্লাসে মুখরিত ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

টাঙ্গাইল সরকারি শিশু সদনের ১০ বছর বয়সী আঞ্জুমান আরা। জন্মের পরই বাবা মারা যান। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আশ্রয় মেলে জেলা শহরের সরকারি আশ্রমে। আগে সরকারিভাবে বিভিন্ন সময় বিনোদনের চাহিদা পূরণ হলেও এবারের উদ্যোগটি ভিন্ন। কারণ সে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা বাঘ ও সিংহ দেখতে পেয়েছে। এতে সে খুবই আনন্দিত।

ঢাকার মিরপুরের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি সোহেল চৌধুরীর (১৪) বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর। প্রায় ৭ বছর ধরে সরকারি আশ্রমে রয়েছে। সাফারি পার্কে আসতে পেরে সে-ও ভিন্নমাত্রা খুঁজে পেয়েছে। চোখে দেখতে না পেলেও সে বিভিন্ন প্রাণির ডাক ও চিৎকারে আনন্দ পেয়েছে।

Advertisement

> আরও পড়ুন- স্কুটি বদলে দিয়েছে পাহাড়ি নারীর পথচলা

ভালো গান গাইতে পারে অপর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মফিজুল হক (১২)। উল্লাস করতে করতে শরীরে সামান্য ক্লান্তি আসায় গাছের ছায়ায় বসে গান ধরে, ‘নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, সকল বাঁধা পেড়িয়ে...’। অন্যরা মনোযোগ দিয়ে তার গান শুনছে। গান শেষ হলে জানায়, সে এসেছে ফরিদপুর থেকে। প্রতিবন্ধি হয়েও এতদূর আসতে পেরে উদ্যোগ গ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।

ময়মনসিংহের অনাথ কিশোরী রোজিনা আক্তার (১৩) জানান, বিভিন্ন জনের কাছে সে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কথা শুনেছে। এবার দেখার সুযোগ পেয়েছে। সে সবার সাথে সকাল থেকেই ঘুরে দেখছে, এটাই যেন তার আনন্দ।

টাঙ্গাইল সরকারি শিশু সদনের (বালক) উপ-তত্ত্বাবধায়ক নুরে লাইলা ৫০ জন অনাথ শিশু-কিশোর নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, এরা সবাই অসহায় হলেও সরকার এদের দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের বাবা-মায়ের অভার পূরণ করা না গেলেও অন্য সবকিছুই সরকার পূরণ করে। সাফারি পার্কে শিশুরা আসতে পেরে খুবই উল্লসিত। এবার বিনোদনে ওরা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

Advertisement

কিশোরগঞ্জের সরকারি শিশু পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সাবিতা আলম ৪২ জন অনাথ শিশু-কিশোর নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট দেখছেন। তিনি জানান, প্রথমবারের মত সাফারি পার্কে অনাথরা আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। ওরা একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতর বড় হচ্ছে। এত বড় পরিসরে একসাথে চিত্তবিনোদনের সুযোগ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।

> আরও পড়ুন- গ্রামের মেয়েরা দেখল বিজ্ঞানের নানা আয়োজন

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম আনোয়ারুল করিম বলেন, ‘গত ২৮ ও ২৯ মার্চ কোনাবাড়িতে দুস্থ শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিভাগের ১ হাজারেরও বেশি অনাথ শিশু, কিশোর ও প্রতিবন্ধি অংশ নেয়। ওরা দূর-দূরান্ত থেকে একত্রিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মূল উদ্যোক্তা গাজীপুর জেলা প্রশাসন।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অনাথ শিশুদের কথা বিবেচনা করেই সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনাথদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১ হাজার অনাথ শিশুর বিনামূল্যে প্রবেশসহ সব ইভেন্ট পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। ওদের আগমনে সকাল থেকেই পার্কটি মুখর ছিল।’

শিহাব খান/এসইউ/এমএস