ফিচার

যেভাবে কেটেছে খোকার ছেলেবেলা

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। এদিন শেখ লুত্ফর রহমান ও তার সহধর্মিনী সায়রা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্ম নিলো একটি ফুটফুটে চেহারার শিশু। বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন ‘খোকা’। এই খোকাই হলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির জনক এবং সমগ্র বাঙালির প্রিয় মানুষ। শৈশব-কৈশোরে বাবা-মা তাঁকে আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। আজ জানবো কিভাবে কেটেছে খোকার ছেলেবেলা-

Advertisement

বঙ্গবন্ধু ছেলেবেলায় দোয়েল ও বাবুই পাখি ভীষণ ভালোবাসতেন। এছাড়া বাড়িতে শালিক ও ময়না পাখি পুষতেন। সুযোগ পেলেই আবার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন বোনদের নিয়ে। পাখি আর জীব-জন্তুর প্রতি ছিল গভীর মমতা। মাছরাঙা ডুব দিয়ে কীভাবে মাছ ধরে, তা-ও তিনি খেয়াল করতেন খালের পাড়ে বসে বসে। ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। তার শৈশব কেটেছে মেঠোপথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাদা পানিতে ভিজে।

গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। তিনি সবার চোখের মণি। সবাই চোখ বুজে তাকে বিশ্বাস করতো। বালকদের দলের রাজা তিনি। সব কাজের নেতা, ভাই-বোনের প্রিয় ‘মিয়া ভাই’। টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে শেখ মুজিবের ছেলেবেলা কেটেছে দুরন্তপনায়। মধুমতির ঘোলাজলে গাঁয়ের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দৌড়-ঝাপ, দলবেঁধে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দুষ্টু বালকদের নেতা।

> আরও পড়ুন- মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব

Advertisement

টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়ির দক্ষিণেই ছিল কাছারি ঘর। সেখানেই মাস্টার, পণ্ডিত ও মৌলভী সাহেবদের কাছে ছোট্ট মুজিবের পড়াশোনার হাতেখড়ি। বিশেষ করে গৃহশিক্ষক মৌলভী সাখাওয়াৎ উল্লাহর কাছে তাঁর লেখাপড়া শুরু হয়। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। ১৯৩১ সালে বাবা লুৎফর রহমান পরিবারবর্গ নিয়ে আসেন তাঁর কর্মস্থল গোপালগঞ্জ। খোকাকে ভর্তি করে দেন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে।

এখানে বছর দেড়েক যেতে না যেতেই খোকা আক্রান্ত হন বেরিবেরি রোগে। এ রোগ থেকেই তার চোখে জটিল অসুখ দেখা দেয়। যার নাম ‘গ্লোফুমা।’ বাবা লুৎফর রহমান অস্থির হয়ে পড়েন। শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে খোকাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেজ্ঞ ডা. টি আহমেদ তার চোখের সার্জারি করেন। গ্লোফুমা থেকে সুস্থ হলেও চিকিৎসক তাঁকে চোখে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। চোখে অসুখের কারণে ১৯৩৪ থেকে চার বছর বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি।

এরপর তিনি বাবার কর্মস্থল মাদারীপুরেও কিছুদিন পড়াশোনা করেন। স্কুলজীবনেই শেখ মুজিব প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। মুজিব যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র এ সময়ে ছাত্রদের উদ্দেশে এক ভাষণ দেওয়ার সময় তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সম্ভবত এটাই তাঁর জীবনের প্রথম গ্রেফতার। পরে ছাত্রদের চাপের মুখে পুলিশ শেখ মুজিবকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

> আরও পড়ুন- দীর্ঘ কবিতার কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

Advertisement

এছাড়া বঙ্গবন্ধু যখন গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশনারি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তখন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তার সাথে ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সে সময়ে তিনি শেরেবাংলার সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলের ছাদ মেরামতের দাবি জানান। পরে তার সে দাবি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হন এ কে ফজলুল হক।

ছেলেবেলার প্রিয় বঙ্গবন্ধু বড় হয়েও ছোটদের ভীষণ ভালোবাসতেন। কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তাঁর প্রিয় সংগঠন। কৈশোরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর জীবনের শেষ দিনটি তিনি কাটিয়েছেন এই সংগঠনের ভাই-বোনদের মাঝে। তাঁর জন্মদিনটি আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালন করি। তাই তো শিশুদের কাছে দিনটি আনন্দের-খুশির।

এসইউ/এমএস