২২ তলা ভবনটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। হালকা নীল রঙের গ্লাসে মোড়া পুরো ভবন। থাইগ্লাস আর ইস্পাতের কাঠামো দেখেই এর আভিজাত্য ঠাওর করা যায়। প্রতিটি তলার বাইরের অংশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র থরে থরে বসানো আছে এখনো। অথচ ভবনটির মধ্যভাগ এখন শ্মশানরূপ।
Advertisement
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের এফআর টাওয়ারটি এখন হাজারো স্মৃতির স্তম্ভ। যে ভবনে সকাল হতেই শত শত প্রাণের সম্মিলন ঘটত, সে ভবন আজ প্রাণহীন। বৃহস্পতিবার সকালে যেখানে আলোর ভুবন ছিল, ২৫টি প্রাণ কেড়ে নিয়ে সেখানে আজ মৃত্যুকূপের নিশানা।
দীর্ঘ সময়ে আগুনে পোড়া ভবনটির ৯ তলা থেকে ১১ তলা পুড়ে অঙ্গার। আগুন আর ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আরও কয়েকটি তলা। গ্লাস ভাঙা প্রায় প্রতিটি তলাতেই। আগুনের লেলিহান শিখা যে সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারে, তারই সাক্ষী বহন করছে এফআর টাওয়ার। এফআর টাওয়ারের ৬ তলায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আরিফ। গতকাল অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি ভবনেই ছিলেন। আগুন লাগার কথা শুনেই সিঁড়ি বেয়ে বেরিয়ে আসেন। মধ্যরাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজ কর্মস্থলের পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছেন। আজ সকালে ফের এসেছেন তিনি।
আরিফ বলেন, দুই বছর হয় এখানে যোগদান করেছি। ভবনটি নিজের মনে হয়েছে এত দিনে। অথচ এখন পোড়া গন্ধ ছড়াচ্ছে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব কয়টি তলাই। ভবনটি হয়ত ঠিক হবে অল্প দিনে, কিন্তু পোড়া মানুষের গন্ধ তো আর সহজে দূর হবে না।
Advertisement
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানো ও হতাহতদের উদ্ধারের কাজ করে। পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং পুলিশ, র্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা উদ্ধারের কাজে সহায়তা করে।
এ ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হলেও, পুলিশের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৫। এতে আহত হয়েছেন ১২০ জন। তাদের মধ্যে বর্তমানে ৫৬ জন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের পর অন্যরা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়েছেন।
এএসএস/এমএসএইচ/এমএস
Advertisement