‘আমি এখন শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি। তোর মতো সাংবাদিককে আমি মেরেই ফেলব। এভাবে বলতে বলতে সদরুল আমিন রিপন নামে সাবেক শিবির নেতা আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছে।’
Advertisement
মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন আহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু এসব কথা বলেন। এর আগে স্বাধীনতা দিবসের দিনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র একটি পক্ষের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন সাজু।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাজু দৈনিক মানববকণ্ঠের লালমনিরহাট প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তাকে গুরতর আহত অবস্থায় প্রথমে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলা নিবার্চনে জয়-পরাজয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরাজিত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার হায়াত খানের মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ পৃথক পৃথকভাবে হাতীবান্ধার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
Advertisement
পরে হাতীবান্ধা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগের বাচ্চু-সেলিম গ্রুপের সঙ্গে সরওয়ার-ভেলু সমর্থিত নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এ অবস্থায় টংভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে বেশকিছু লোক লাঠি-সোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মেডিকেল মোড়ের দিকে আসতে থাকে। পথিমধ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু সশস্ত্র ওই গ্রুপের ছবি তুলতে গেলে বেধড়ক মারধরের শিকার হন।
সেখানে সিরাজুল সাজুকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম হোসেনের খালাতো ভাই ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের এক সময়ের শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত রিপন ও তার ছোট ভাই খোকন। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক সাজুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান সাজু বলেন, আমি ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বের করতেই আওয়ামী লীগ নেতা সেলিমের খালাতো ভাই ও শিবির ক্যাডার রিপনসহ তিনজন ছুটে এসে আমাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় রিপন আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে বলেন, আমি এখন শিবির করি না, আওয়ামী লীগ করি। তোর মতো সাংবাদিককে আজ আমি মেরেই ফেলব। পরে জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাতীবান্ধার গোতামারী এলাকার বাসিন্দা সদরুল আমিন রিপন এলাকায় সবার কাছে শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তবে তার খালাতো ভাই ও নব্য আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত সেলিম হোসেনের সুবাদে রিপন এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন।
সাংবাদিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা ও উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, লালমনিরহাট ইউনিটের সভাপতি খোরশেদ আলম সাগর বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতর লুকিয়ে থাকা শিবির ক্যাডার রিপন ও তার লোকজন সাংবাদিক সাজুকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরতর আহত করেছে। সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। অন্যথায় স্বাধীনতা দিবসে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানা পুলিশের ওসি ওমর ফারুক বলেন, হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক।
এএম/এমএস