জাতীয়

‘আল মাহমুদ অনেককেই খারিজ করে দিয়েছিলেন’

‘দীর্ঘকাল কবি আল মাহমুদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। বয়সে বড় হলেও তাকে বন্ধুই মানতাম। বহু সাহিত্য সম্মেলনে একসঙ্গে থেকেছি, খেয়েছি। তার কবিতা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। মানুষ চলে যাবেই। তবুও আল মাহমুদের চলে যাওয়াটা বুকের মধ্যে বড় ধাক্কা দিয়ে গেল’ -বলছিলেন, কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

Advertisement

কবি আল মাহমুদ শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১১টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। কবি আল মাহমুদের মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন এই সাহিত্যিক।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নিয়েছি আল মাহমুদের সঙ্গে। প্রায় জায়গাতেই আল মাহমুদ আর আমি একই ঘরে পাশাপাশি খাটে রাত কাটাতাম। রাতভর গল্প হতো। কোনো রাখঢাক থাকতো না।

একবার যশোরে গিয়েছি সাহিত্য সম্মেলনে। মঞ্চে কবি শামসুর রহমান, সৈয়দ শামসুল হকেরা। আমরা মঞ্চের সামনে বসা। অনুষ্ঠান চলাকালে খবর এলো কবি হাসান হাফিজুর রহমান রাশিয়ায় মারা গেছেন। এ খবরে মঞ্চে বসা অনেকেই কান্না জুড়ে দিল। বলা যায় এক ধরনের নাটকীয়তা সৃষ্টি হলো। এমন অবস্থা দেখে আল মাহমুদ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ভাব দেখেন। বেঁচে থাকতে হাফিজের খবর নেয়নি কেউ। সম্মান জানায়নি, অথচ এখন কান্না থামছেই না।’ এমন বহুস্মৃতি আছে তার সঙ্গে -বলেন হাসান আজিজুল হক।

Advertisement

লেখক বলেন, তার (আল মাহমুদ) কবিতায় প্রেম আর সরলতা প্রাধ্যন্য ছিল বলেই সকলে মুহূর্তেই লুফে নিত। অসাধারণ লিখনি তার। তবে শেষের দিকে ধর্মীয় উন্মাদনায় কেন মিলে গেল, তা বুঝতে পারলাম না। ধর্মীয় রীতি আমরাও স্বীকার করে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু গোড়ামি তো মানতে পারি না। ধর্মীয় উন্মাদনা আল মাহমুদের কবিতাকে সংকীর্ণ করেছিল।

হাসান আজিজুল হক আরও বলেন, তার (আল মাহমুদ) কালের কলস কাব্যগ্রন্থ আমি এক নিঃশ্বাসে শেষ করেছি, অসাধরণ। কিন্তু শেষ বেলায় তার কী হলো তা বুঝতে পারলাম না। সে অনেককেই এড়িয়ে চললেন। অনেককেই খারিজ করে দিলেন। এমনকি জীবনানন্দকেও খারিজ করে দিলেন। সম্ভবত, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তার এই পরিবর্তন। পরে আমরাও যে তার সঙ্গে খুব মিশেছি, তা নয়। আমরাও তো আর তার খবর রাখিনি।

কবি চলে গেলে কষ্ট হয় অনেকের। একজন কবি সাধারণ মানুষ নন। তিনি অনেকের। তার মৃত্যু খবর শুনে এই সকালে মনটা বিষণ্নতায় ভরে উঠল। যেখানেই থাকুক, শান্তিতে থাকুক। আর থাকুক আমাদের স্মৃতিপটে -যোগ করেন এ লেখক।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কবি আল মাহমুদকে ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে আল মাহমুদের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

Advertisement

এএসএস/আরএস/এমএস