মতামত

ব্যবহারকারী-বান্ধব রাইড শেয়ারিং নীতিমালা চাই

মাত্র ২ বছরেই ঢাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাইড শেয়ারিং সেবা। এরই মধ্যে উন্নত সেবা প্রদান ও প্রাপ্তির লক্ষ্যে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা করছে সরকার।

Advertisement

ব্যবহারকারী হিসেবে আমরা এমন নীতিমালা চাই, যেখানে সেবাদাতা এবং সেবাগ্রহিতা দু'জনের উপকৃত হবেন। কিন্তু নীতিমালার যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে তার কয়েকটি দিক একজন ‘রাইডার ও ইউজার’ এর পক্ষে মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে- রাইড শেয়ার কার্যে ব্যবহৃত গাড়ি/বাইক এর বয়স নূন্যতম এক বছর হতে হবে।

আমি জানিনা কি জন্য এমন নিয়ম করা হচ্ছে। ব্যবহারকারী হিসেবে আমি সবসময় নতুন বাইক/গাড়ি পছন্দ করবো। ঠিক তেমনি একজন বাইকার/ড্রাইভারও চাইবে উন্নত যাত্রী সেবার জন্য তার পুরনো বাইক/গাড়ি বদলে নতুন বাহনে সেবা দিতে। কিন্তু এই নিয়মের ফলে এটি সম্ভব নাও হতে পারে। সেই সাথে রাইড শেয়ারের জন্য যারা কিস্তিতে বিভিন্ন কোম্পানির বাইক/গাড়ি কিনেছিলেন তারাও বিপদে পড়বেন।

Advertisement

এর চেয়ে নিয়মটি এমন হতে পারে- রাইড শেয়ার করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মেয়াদ নূন্যতম ১/২ বছর হতে হবে। তাতে অন্তত যাত্রীরা অভিজ্ঞ ড্রাইভার/বাইকার পেতেন। যে কারণে দূর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কমে যেত।

নীতিমালায় আরো রয়েছে- একটি বাহন শুধুমাত্র একটি অ্যাপেই নিবন্ধনের মাধ্যমে সেবা দিতে পারবে।

অনেকেই এটির পক্ষে কথা বলে বলছেন এবং যুক্তি হিসেবে ব্যবহারকারীদের রিকোয়েস্ট বাতিল না করে ঝুলিয়ে রাখার কথা বলছেন। এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি হয় উবারে। কিন্তু যদি খেয়াল করে দেখেন, এটি কিন্তু সবসময় হচ্ছে না। আর যে বাইকার/ড্রাইভারের মনে এই চিন্তা আছে সে এটা করবেই। হয়ত কিছুটা কমবে। কিন্তু যদি এরকম হয় তাহলে আসলে কি হতে পারে?

সকাল হলেই উবারে সার্জ, পাঠাও এর হটজোন শুরু হয়ে যায়। এখন যদি একটা এপে একজন সেবা দিতে পারে, তাহলে গাড়ি এবং বাইক ভাগ হয়ে যাবে। যদি সেটা ৫০-৫০ হয়, তাহলে এখন থেকে ডাবল হট জোন বা সার্জ যুক্ত হবে "ডিমান্ড" বাড়ার অযুহাতে। সেই সাথে যাদের যেটা বেশি (বাইক-কার) তারা সেটার প্রমো অফার বন্ধ করে দিবে।

Advertisement

অন্যপক্ষে যেহেতু বাইকার/ড্রাইভাররা একটা মাত্র অ্যাপে সেবা দিতে পারবে, সেহেতু রাইড শেয়ারকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর মাঝে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এদের নিজেদের অ্যাপে আনার জন্য যেটার লাভ সাময়িক ভাবে বাইকার/ড্রাইভাররা পাবে। কিন্তু পরবর্তিতে কমে যাবে অথবা বন্ধ হয়ে যাবে তাদের দৈনিক/সাপ্তাহিক কোয়েস্ট, বুস্ট সহ অন্যন্য প্রমোশনাল অফার যেটার কারণে অনেকের আয় কমে যাবে।

নীতিমালায় আরো রয়েছে- ঢাকা মেট্রো বাদে অন্য কোন রেজিষ্ট্রেশনকৃত বাইক/গাড়ি দিয়ে ঢাকায় রাইড শেয়ার করা যাবে না।

আমি একমত পোষণ করি যে, রাইড শেয়ারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা ঢাকায় যানজটের অন্যতম কারণে পরিণত হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১৬ সালে ঢাকায় চলাচলের গতিবেগ ঘন্টায় ২১ থেকে কমে ৭ কি.মি. -তে এসেছে। যদিও তখন রাইড শেয়ারিং ছিল না। যদি এই নিয়ম কার্যকর হয় তাহলে ৫০ ভাগের বেশি বাইক কমে যাবে। এতে ব্যবহারকারী হিসেবে আমাকে আবারো রাইড শেয়ারিং যুগের প্রথম দিন গুলোতে ফিরে যেতে হবে। সময় মত বাইক/গাড়ি পাওয়া যাবে না। পেলেও অনেক দূর হতে যুক্ত হতে হবে।

এছাড়া বাইকার/ড্রাইভারদের ক্ষেত্রে কি হবে? তারা কি ঢাকা ছেড়ে চলে যাবে? হয়তো না! যেহেতু ৫০ ভাগের বেশি বাইক/গাড়ি অ্যাপ থেকে বাদ পড়বে সেহেতু অ্যাপে রাইড পাওয়া কষ্টকর হবে সবসময়। সারাদিন হট জোন, সার্জের যন্ত্রণা তো থাকবেই। তখন এসব ইউজাররা সময় বাঁচানোর জন্য এসব নন অ্যাপ বাইকে অফলাইনে রাইড নেওয়ার চেষ্টা করবে। এসব নন অ্যাপের বাইক/গাড়ি গুলোও তখন সিএনজির মত মোড়ে মোড়ে ‘ক্ষেপ’ এর আশায় থাকবে। যেহেতু তাদের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে ইউজার এবং রাইডার/ড্রাইভার দুই পক্ষকেই আরো বিপদ এবং ঝুঁকির মাঝে পড়তে হবে।

এই নিয়ম না করে বরং রাইড শেয়ারিং এর সময় ‘লিমিট’ করে দেয়া যেতে পারে। যেটা অনেক দেশেই আছে। যেমন- সৌদি আরবে ১২ ঘন্টা, লন্ডনে ১০ ঘন্টা, নিউইয়র্কে ১০ ঘন্টা।

সবশেষে একথাই বলতে চাই, যানজটের এই রাজধানীতে সময় বাঁচিয়ে একটু স্বস্তিতে চলতে ব্যবহারকারী-বান্ধব রাইড শেয়ারিং নীতিমালা চাই।

এএ