শিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর নতুন কৌশল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করা হলেও থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর কোচিং বাণিজ্য। বরং নতুন কৌশলে এগুচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে এইচএসসির সিলেবাসের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং সেন্টারের দিকে ঝুঁকছে।২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এ ঘটনার পরপরই কোচিং সেন্টারগুলোর ছত্রছায়ায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়ে আন্দোলনে নামে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এসব আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট করেন মিনারা বেগম ও রুহুল আমিনসহ ২৬ জন অভিভাবক। এসব মামলার খরচও বহন করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার। গত ৮ জুলাই মামলাটির রায় দেন হাইকোর্ট। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে রায় দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তারা। সর্বশেষ সোমবার আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। সে হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সব সুযোগ বাতিল হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের।এদিকে ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বাতিল ও ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনায় কোচিং সেন্টারগুলোও নিয়েছে নতুন কৌশল। গত বছর ১৫ অক্টোবর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের পর থেকে কোচিং সেন্টরগুলো একাদশ শ্রেণির প্রথমবর্ষে অধ্যয়নকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং শুরু করেছে। বেশ কিছু কোচিং সেন্টার শিক্ষার্থীদের মাথার মগজ ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে হলে প্রয়োজন বেসিক বিষয়গুলো জানা। কারণ একাদশ শ্রেণির সিলেবাস থেকে তো প্রশ্ন হয় না, প্রশ্ন তো হয় বেসিক বিষয়গুলো থেকে। তাই তারা শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণির প্রথমবর্ষ থেকে ভর্তির কার্যক্রম চালু রাখছেন। সেখানে শেখানো হচ্ছে প্রতিটি বিষয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত প্রস্তুতির উপায়। আর এতে করে কোচিং সেন্টারগুলো খুব সহজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এমনকি এসময়ে ভর্তি হলে রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ। একাদশ শ্রেণির প্রথমবর্ষে ভর্তি হলে একটি অংক। এইচএসসি পরীক্ষার আগে হলে নির্দিষ্ট টাকার অর্ধেক ছাড়। এছাড়াও পরীক্ষার মধ্যে ও পরে ভর্তি হলে রয়েছে কোচিং বাবদ খরচের বেশ তারতম্য। এইচএসসি পরীক্ষার পর হাতে সময় কম থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও অপেক্ষা করছেন না ফল প্রকাশ পর্যন্ত। তাই তারা এইচএসসি প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে পড়ালেখা। এমনকি কোনো কোনো পরিবারের ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার পরই শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি। তাই অভিভাবকরাও ঝুঁকছেন কোচিং সেন্টারগুলোর দিকে। আর এতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটসহ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার একবারই সুযোগ রাখলেও কমছে না কোচিং সেন্টারগুলোর ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক বাণিজ্য। সামান্য হতাশা থাকলেও কোচিং ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ তারা আগের মতোই শিক্ষার্থী পাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষা এগিয়ে আনা এবং একবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে। কোচিং সেন্টারগুলোর কোচিং বাণিজ্যও কমে আসবে। তারা এখন ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে কোচিংয়ে ভর্তিসহ যেসব কৌশল গ্রহণ করেছে তাতে তারা সফল হবে না। কারণ বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই তাদের সে কৌশলে সাড়া দেবে না।আর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে এইচএসসি এবং এসএসসি সিলেবাসের সম্পৃক্ততা কম এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটাও তাদের একটা কৌশল। এটা বলে তারা শিক্ষার্থীদের কোচিংমুখী করার চেষ্টা করছে। তবে তাতে তারা সফল হবে না।আইকন প্লাস কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. নাঈম হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়া বাতিল করার মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে না । কারণ এরকম সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন একাদশ শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হচ্ছে। তারা কোচিংয়ের প্রতি আরো বেশী ঝুঁকছে। এ সিন্ধান্তের ফলে গ্রামের শিক্ষার্থীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।কোচিং সেন্টারগুলো কয়েকজন বড় বড় মোগল নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বাণিজ্য। তারা কোচিংয়ের আড়ালে শিক্ষার্থীদের মগজে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু একবারই ভর্তির সুযোগ রয়েছে, তাই তোমাদের একটু ঝুঁকি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন অংকের বিনিময়ে ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রে উত্তরপত্র পাঠানোরও চুক্তি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এইচএসসির সিলেবাসের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের দিকে ঝোঁকার মূল কারণ। দেশের প্রধান কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে এমন কিছু বিষয় আনা হয়, যার সঙ্গে এইচএসসির সিলেবাসের নূন্যতম সম্পর্ক নেই। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ জ্ঞান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের ওইসব বিষয়ে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্যও গণিতবিষয়ক প্রশ্ন থাকে। যেহেতু উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক শিক্ষার্থীরা গণিত পড়ে না, তাই বেশিরভাগই ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠে কোচিং সেন্টার। আর প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা কোটি কোটি টাকা।এমএইচ/বিএ/এআরএস

Advertisement