কংগ্রেসের কর্মীদের বহুদিনের দাবি ছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিক। অবেশেষে সেই পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মেয়ে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন তিনি। কংগ্রেস কর্মীরা এতে উল্লসিত।
Advertisement
এ বিষয়ে কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘কংগ্রেস কর্মীরা অনেকদিন ধরেই প্রিয়াঙ্কাকে চাইছিলেন। তার আসাতে কংগ্রেস কর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন, অনেক বেশি কাজ করতে পারবেন। এতে কংগ্রেসের ভালোই হবে।
প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চেহারার মিল রয়েছে। ভোটের আগে তিনি কি সামলাতে পারবেন গুরু দায়িত্ব? এই প্রশ্নে রাজনৈতিক মহলে দোলাচল থাকলেও কংগ্রেস দারুণ আশাবাদী। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘পরিবারের রক্ত ওর মধ্যে আছে। রয়েছে অভিজ্ঞতাও। প্রিয়াঙ্কা ভালো কাজ করবে। এজন্য কংগ্রেসের ভোটও বাড়বে। কংগ্রেস কর্মীরাও খুব উজ্জীবিত।’
নারী হিসেবে প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আগমন ইতিবাচক বলেই মনে করেন কৃষ্ণা। তার মন্তব্য, ‘পুরুষশাসিত সমাজে মহিলারা পিছিয়ে। আমাদের দলে মহিলারা আছেন। তবে উনি এলে দলে অনেক সংখ্যালঘু, দলিত, মহিলারা এগিয়ে আসবে।’
Advertisement
তবে নারী বলে প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আগমন যে বাড়তি কিছু, এমনটা মনে করছে না তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। নাট্যব্যক্তিত্ব ও তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেন, এই আসাটা সহজাত। তবে একজন রাজনীতিতে এসেছেন, তিনি ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি, এটুকুই! এটা নিয়ে আলোচনারও কিছু নেই। আজকাল প্রচুর মহিলা রাজনীতিতে আসেন। যেখানে মহিলাদের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে তিনি এসেছেন। এটা ভালই তো!
তৃণমূলের সর্বময় কর্তৃত্ব একজন নারীর হাতে থাকলেও তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত প্রিয়াঙ্কার জন্য কোনো বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন। এতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ হবে বলেও তিনি মনে করেন না। পরশ বলেন, ‘কংগ্রেসের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে কিছু লোক উজ্জীবিত হবে। ভোটবাক্সের ফল শুধু রায়বেরেলিতেই পাল্টাবে। অন্য কোথাও কিছু হবে না।’
সিপিএম নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য প্রিয়াঙ্কার আগমনকে স্বাগতই জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘রাজনীতি করার অধিকার সকলের আছে। একজন অল্পবয়স্ক মেয়ে রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়েছে, আমাদের ওয়েলকাম করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক ছেলেপুলে কিছু রাজনীতি না করে শুধু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর অমুক বলে উপরে উঠে যায়। হঠাৎ করে এমপি, এমএলএ হয়ে যাওয়ার থেকে অল্পবয়সীদের রাজনীতি করাটা ভালো। তবে প্রিয়াঙ্কার আগমনে কংগ্রেসের পালে বাড়তি হাওয়া লাগবে কি না সেটা পরের কথা।
বিষয়টা নিয়ে নতুন ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে ভাবনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উষসী পাল ব্যাপারটাকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘কে কোথায় কী হল, তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না। আমাদের এত ইস্যু রয়েছে, এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আসল হলো নীতি, কে নেতা সেটা বড় নয়।’
Advertisement
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কৃষিজীবী নকুল মাজি। তার বক্তব্য, ‘আলুর ফলন ভাল হওয়া সত্ত্বেও এবার আমরা দাম পাচ্ছি না। সেটা আমাদের চিন্তা। কে নেতা হল তাতে আমাদের কী আসে-যায়?
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একটি বেসরকারি কারখানার শ্রমিক তাপস গুছাইত অবশ্য ইন্দিরা পরম্পরায় গুরুত্ব দিলেন। তার মতে, ‘ইন্দিরা গান্ধীর মতো জোরালো নেতৃত্ব আমাদের দরকার। তবে প্রিয়ঙ্কা সেই জায়গা নিতে পারবেন কি না, এখনই বলা মুশকিল।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে।
এনএফ/জেআইএম