ভ্রমণ

ঘুরে আসুন কৃষ্ণপুরের বধ্যভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার শেষ এবং হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার শেষ গ্রাম কৃষ্ণপুর। এই গ্রামেই রয়েছে একটি বধ্যভূমি। সেই কৃষ্ণপুর গ্রামের শতকরা ৯২ জন মানুষই শিক্ষিত। এখানে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস। যাতায়তের ব্যবস্থা খুব ভালো নয়। বর্ষায় নৌকা আর বাকি সময় হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।

Advertisement

সেদিন আমরা কৃষ্ণপুরের বধ্যভূমি দেখার পরিকল্পনা করলাম। তাই বিকেলে চৌধুরী মোহসিন, স্বপন দেব, লালন শাহ, নাজমুল, গিয়াস উদ্দিনসহ চললাম কৃষ্ণপুরে। সেখানে গিয়ে জানলাম, কৃষ্ণপুরে একটি বর্বর হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল। আজ থেকে ৪৭ বছর আগে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী কৃষ্ণপুরের ১২৭ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল।

১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা থেকে ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্প থেকে ১টি স্পিডবোট ও ৮ থেকে ১০টি ভাওয়ালী নৌকায় করে ১০ থেকে ১৫ জনের পাকিস্তানি হানাদার ওই গ্রামে আসে।

> আরও পড়ুন- গোকর্ণ গ্রামে আনন্দ ভ্রমণ

Advertisement

হানাদাররা এখানে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ গণহত্যায় অন্তত ১২৭ জন পুরুষকে স্থানীয় কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। পরে আগুন দিয়ে গ্রামের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। এছাড়া গ্রামের নিরীহ নারীদের নির্যাতন করে। এ হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন আনুমানিক বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে।

বর্বরদের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছের একটি মজা পুকুরে কচুরিপানার নিচে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানি হানাদাররা চলে গেলে তারা হত্যাযজ্ঞস্থল থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে স্থানীয় বলভদ্র নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে গ্রাম ত্যাগ করে।

প্রতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ স্কুলের পাশের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে গণহত্যা দিবসটি স্মরণ করে থাকে। হত্যাকাণ্ডে শহীদ ১২৭ জনের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ৪৫ জনের নাম সম্বলিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু করে স্থানীয় মানুষ। তবে হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪৫ জনের নাম আজও ওঠেনি শহীদ তালিকায়।

> আরও পড়ুন- গাইবান্ধার যত ঐতিহাসিক স্থাপনা

Advertisement

শহীদদের স্মরণে ঘটনাস্থলের পাশে সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করে। তবে আজ পর্যন্ত সেটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।

বধ্যভূমি দেখার পরই কৃষ্ণপুরের একজন পল্লি চিকিৎসক শংকু বাবুর সাথে দেখা হয়। তিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে সময় দেন এবং আপ্যায়ন করেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, বধ্যভূমির স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ কাজ শেষ করা দরকার।

এসইউ/পিআর