রাষ্ট্রদূত মুহা. শহীদুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়মিতকর ও ঝুঁকি কমানোর বিষয়ে দেশটির সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি এখনও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।
Advertisement
দেশটির সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে উভয় দেশের মধ্যে শিগগিরই ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) স্বাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
হাইকমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলামের সঙ্গে ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মিনিস্টার ডারেল লেকিংয়ের ট্রেড মিনিস্টারের কার্যালয়ে বৈঠক হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করেন তারা। ডারেল লেকিং বাংলাদেশের উন্নয়নে মালয়েশিয়ার সহযোগিতার কথা রাষ্ট্রদূতকে জানান।
Advertisement
এ সময় হাইকমিশনার মুহা. শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ববাসী বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে। গত ১০ বছরে গড় জিডিপি অর্জন ছিল ৬ এর ও বেশি।
তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৭.৮৬ ভাগ অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের রফতানি এখন ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ও বেশি। দেশের ৫০ বছর পুর্তিতে ২০২১ সালে রফতানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সরকার বিস্তারিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ বান্ধব নীতির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আসতে শুরু করেছে।
বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে দেশের বিভন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকনোমিক জোন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে চাহিদা মোতাবেক সরকার সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।
বৈঠকে ডারেল লেকিং বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং উন্নয়নের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ উল্লেখ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও দু'দেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য উভয় দেশের বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান ট্রেড মিনিস্টার।
Advertisement
বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি ও মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ান আসিয়ান বাণিজ্য অঞ্চলের একটি করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি পণ্যে ও রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে দূতাবাসের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) মো. রাজিবুল আহসান এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আমরা মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করছি। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গন্তব্য। সে বিষয়টি ব্যবসায়ীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।
প্রশ্নের জবাবে মো. রাজিবুল আহসান বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের একটি সম্ভাবনাময় বাজার। দেশটির আসিয়ান বাণিজ্য অঞ্চলের একটি করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি পণ্যে ও রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার, অ্যাসোসিয়েটেড চাইনিজ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, মালয় চেম্বার অব কমার্স, ফেডারেশন অব মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকসারার্স, মালয়েশিয়া রিটেইলার্স অ্যাসোসিয়েশন কুয়ালালামপুর, পারদাসামা, কুয়ালালামপুর সেলেঙ্গর ইন্ডিয়ান চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, জহুরবারু চাইনিজ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব জহুর মালয়েশিয়া, সারওয়াক চেম্বার অব কমার্স, পেনাং চেম্বার অব কমার্স, কুচিং চাইনিজ জেনারেল চেম্বার অব কমার্স, ফেডারেশন অব সাবা ইন্ডাস্ট্রিজ, কোটা কিনাবালু চাইনিজ চেম্বারসহ প্রায় সব জাতীয় ও প্রাদেশিক চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আলোচনায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সার্বিক সহযোগিতা দিতে সম্মত হন মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ী নেতারা। এছাড়া মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বেজার আওতাধীন ইকনোমিক জোনে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিনিয়োগের সম্ভাব্য যাচাইয়ে শিগগিরই ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমাণ হলো ৬৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১০ সালে ছিল ১১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্তমান সরকারের সময়ে মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পন্য রফতানিতে অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান কমার্শিয়াল উইং প্রধান মো. রাজিবুল আহসান। তিনি বলেন, ২০০৯-১০ সময়ের তুলনায় ২০১৭-১৮ সালে মাত্র ৮ বছরের ব্যবধানে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের রফতানি চারগুণ বেড়ে ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এমআরএম/জেআইএম