আইন-আদালত

তারা মানবতার শত্রু

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মৌলভীবাজারের রাজনগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তাকে পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। যারা এ অপরাধ করেছেন তাদের মানবতার শত্রু বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

Advertisement

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের রাজনগর থানার মো. আকমল আলী তালুকদারসহ চার জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় আসার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

প্রসিকিউটর হায়দার আলী জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। তাই রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা দুটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপরটিতে সবাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর প্রসিকিউটর হায়দার আলী সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘এ মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়েছিল। আজ তার রায় হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল গণহত্যার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মৌলভীবাজারের রাজনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৯ জনকে বেঁধে পিটিয়ে, গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ওই গ্রামে যতগুলো বাড়িঘর ছিল তার সবগুলোই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং ওই গ্রামের যে ক’জন মহিলা ছিলো সবাইকে ধর্ষণ করা হয়।’

Advertisement

আরও পড়ুন : মৌলভীবাজারে স্বস্তি, দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।’

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী ও শেখ মুশফেক কবীর। আসামি আকমল আলীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান ছিলেন।

Advertisement

পলাতক আসামিরা হলেন- আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (৬২), আনিছ মিয়া (৭৬) ও আব্দুল মোছাব্বির।

আরও পড়ুন : মৌলভীবাজারের চারজনের ফাঁসির আদেশ

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘দ্বিতীয় অভিযোগটি ছিল অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার। রাজনগরের পশ্চিমবাগ গ্রামের চক্রবর্তীদের বাড়িতে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে দুইজনকে ধরে নিয়ে যায় আসামিরা। এই দুইজনের আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল। তাদের লাশেরও সন্ধান পায়নি স্বজনেরা।’

তিনি বলেন,‘এই অভিযোগটিও প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগে আসামিদের যাবজ্জীবন কারাভোগের আদেশ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে রায়ে সন্তুষ্ট। ন্যায় বিচার পেয়েছি।’

প্রসিকিউটর হায়দার আলী বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সমস্ত অপরাধের শীর্ষ অপরাধ হলো গণহত্যা। আর রাজানগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কেবল একটি জায়গায় মানুষকে হত্যা করা নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করেছে তারা মানবতার শত্রু।’

এফএইচ/এনএফ/পিআর