খেলাধুলা

ইতিহাসের হাতছানি ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার সামনে

শিরোনাম দেখে অনেকেই ভ্রু কুঁচকাতে পারেন। ইংল্যান্ড তো বিশ্বকাপ একবার হলেও জিতেছে, ক্রোয়েশিয়া এখনও ফাইনালেই উঠতে পারেনি। তাহলে ক্রোয়েশিয়ার মতো ইংল্যান্ডের সামনে ইতিহাসের হাতছানি কেন?

Advertisement

৫২ বছর আগে একবার শিরোপার স্বাদ নিতে পেরেছিল ইংরেজরা। সেই ১৯৬৬ সালে। নিজেদের দেশের মাটিতে, লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে রানী এলিজাবেথের হাত থেকে ট্রফি নিয়েছিলেন স্যার ববি মুর। এরপর কেটে গেছে ৫৮টি বছর। ইংল্যান্ড ফাইনালেই উঠতে পারেনি। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছে।

২৮ বছর পর আবারও সেমির দেখা পেয়েছে ইংলিশরা। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে যারা মোটেও আলোচনার টেবিলে ছিল না। তারওপর, কোচ গ্যারেথ সাউথগেট যখন নামকরা কয়েকজন তারকাকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছিলেন, তখন তো রীতিমতো তুমুল গতিতে তার দিকে সমালোচনা ধেয়ে আসছিল। বলা হচ্ছিল, একেবারে তরুণ দলটা নিয়ে রাশিয়া তিনি কি করবেন? পুরো দলটাই তো কচিকাচার আসর!

সাউথগেট ব্রিটিশদের শান্ত থাকতে বলেছিলেন। অনুরোধ করেছিলেন, তাদের ওপর আস্থা রাখতে। বিশ্ব দরবারে আলোচনার টেবিলে থাকলেই যে ভালো কিছু করা সম্ভব, তা নয়। না হলে তো নিশ্চিত, প্রতি আসরে চ্যাম্পিয়ন হতো আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল। আলোচনার বাইরে থেকে, স্পটলাইট নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে রেখে কীভাবে তরতর করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসা যায়, সেটা দেখিয়েছে সাউথগেটের সেই ‘কচিকাচার আসর’ই।

Advertisement

৫৮ বছর পর এখন আবারও বিশ্বজয়ের দ্বারপ্রান্তে হ্যারি কেইনের দল। আর মাত্র তো দুটি ধাপ। এরপরই স্বপ্ন সম্ভব হয়ে উঠবে ইংল্যান্ড ফুটবল দলের। সোনালি ট্রফিটা হয়তো এবার লন্ডনেই শোভা পাবে। ওয়েস্ট মিনিস্টার হলো কিংবা টেমস নদীর তীরে বিশাল জনস্রোতের সামনে তুলে ধরা হবো উজ্জ্বল আলোয় রাঙিয়ে দেয়া ইংল্যান্ড ফুটবল দলের বিশ্বজয়ের সাফল্য।

১৯৬৬ সালে নিজ দেশের মাটি থেকে বিশ্বকাপ জয় করেছিল ইংল্যান্ড। এবার জিততে পারলে প্রমাণ হবে, অন্যরাই শুধু নয়, ইংল্যান্ডও পারে নিজ দেশের বাইরে থেকে বিশ্বকাপ জিততে। ইতিহাসের হাতছানি তো এখানেই। তারওপর, যারা বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছিলেন যে, ইংল্যান্ডের পক্ষে আর হয়তো বিশ্বকাপ জয় সম্ভব হবে না, তাদের সেই বিশ্বাস ধুলিস্যাৎ করে দিতে পারবে হ্যারি কেইন এবং গ্যারেথ সাউথগেটরা।

ক্রোয়েশিয়া স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছে ১৯৯৮ সালে। প্রথমবারেই বাজিমাত করেছিল তারা। ডেভর সুকারের অসাধারণ নৈপুণ্যে ক্রোয়েশিয়া সেবার পৌঁছেছিল সেমিফাইনালে। স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল। পরে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে হয়েছিল তৃতীয়। ডেভর সুকার ৬ গোল করে জিতেছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার, গোল্ডেন বুট।

সেই ডেভর সুকার এবার ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি। আর ক্রোয়াটরাও পেয়ে গেছে তাদের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা দলটিকে। সোনালি প্রজন্ম বলতে যাদের বোঝায়। মদ্রিচ, রাকিতিচ, মানজুকিচ, পেরিসিচ, কোভাচিচ, রেবিক, সুবাসিচ, লভরেন ডেজান- তারকার অভাব নেই। প্রত্যাশা মতোই সেমিফাইনালে উঠে এসেছে এবারের ক্রোয়েশিয়া।

Advertisement

সামনে ইংল্যান্ড। এই বাধাটি পার হতে পারলেই স্বপ্নের ফাইনাল। এরপর তো আর মাত্র একটি বাধা। সেটা পার হতে পারলেই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে যাবে। ফুটবল বিশ্বও পেয়ে যাবে ৯মতম নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ক্রোয়েশিয়ার জয়জয়কার ছড়িয়ে পড়বে তখন দিগ থেকে দিগন্তে। লুকা মদ্রিচ কিংবা রাকিতিচরা হয়ে যাবে মেসি-নেইমার-রোনালদোর চেয়েও বড় তারকা।

সুতরাং, দু’দলের সামনেই ইতিহাসের হাতছানি। দু’দলই চায় সেই ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকতে। কিন্তু থাকবে মাত্র একটি দল। বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় দ্বিতীয় সেমির যুদ্ধে মুখোমুখি ক্রোয়েশিয়া-ইংল্যান্ড। যুদ্ধের ভেন্যু মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম। কার সমাপ্তি এবং কে ইতিহাস গড়বে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

লুঝনিকি স্টেডিয়ামে হাই ভোল্টেজ সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে নির্ভার হ্যারি কেইন। ইংল্যান্ড যে এতদুর এগিয়ে এলো তা অধিনায়ক কেনের দারুন নৈপুন্যে। কিন্তু তিনি সব নৈপুণ্য ভাগ করে দিচ্ছেন পুরো দলকেই। কেইন বলেন, ‘আমাদের দল একটা পরিবার। এখানে আমি একা কেউ নই। আমাদের স্বপ্ন ছুঁতে আর দুটো ম্যাচ জিততে হবে। এরপরই আনন্দ করব।’

বিশ্বকাপের আগে তো ইংল্যান্ডকে কেউ গোনায়ও ধরেনি। এবার অন্তত হিসেবে মধ্যে ইংলিশদের নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ কেইনের। তিনি বলেন, ‘মেসি, নেইমার, রোনালদোকে নিয়ে তো অনেক লেখা হল। তারা তো নেই আর বিশ্বকাপে। এবার ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কিছু লিখুন! ওরা অনভিজ্ঞ বলে তো অনেক সমালোচনা করেছেন। কটাক্ষ করেছেন। এবার তারা অভিজ্ঞ হয়েছে তো!’

তো কোন মন্ত্রবলে এতদুর উঠে এলো ইংল্যান্ড? সেটাই জানাচ্ছেন কেইন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমাদের কেউ ধর্তব্যের মধ্যেও রাখেনি। সেটাই আমাদের বেশি করে তাতিয়েছে।’

তবে ক্রোয়েশিয়া হ্যারি কেইনকে নিয়ে যে পরিকল্পনা করছে, তাতে ইংলিশ অধিনায়ক না আবার মেসি-নেইমার কিংবা রোনালদোর মত বোতল বন্দী হয়ে যান! ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ হুমকি দিয়ে রেখেছেন, মেসির মত কেইনকেও থামাতে প্রস্তুত তারা। দালিচ বলেন, ‘হ্যারি কেইন সবচেয়ে বেশি গোল করেছে। ওকে আটকানো কঠিন; কিন্তু আমাদেরও দারুণ সেন্টারব্যাকরা রয়েছে। আমরা মেসিকে আটকে দিয়েছি। আটকেছি ডেনমার্কের এরিকেসেনকেও (ক্রিশ্চিয়ান)। আশা করি কেইনকেও আটকাব।’

নিজেদের ওপর পুরো আস্থা আছে ক্রোয়েশিয়ার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের শক্তির উপর পুরো আস্থা আছে। ইংল্যান্ডকে ভয় পাই না।’ তা হলে কি এই ইংল্যান্ড আদৌ ভাল দল নয়? দালিচের জবাব, ‘একবারও বলছি না এমন কথা। ভাল না হলে সেমিফাইনালে উঠত না।’

এখানেই থামেননি ক্রোয়েশিয়ার কোচ, ‘ওদের যেটুকু খেলা দেখেছি তাতে বুঝেছি, ওরা খুব দ্রুত ডাইরেক্ট ফুটবল খেলে। সেটপিসেও ভাল। কর্নার পেলে ওদের লম্বা ফুটবলাররা যে কোনও সময় হেডে গোল করে যেতে পারে। এগুলো মাথায় রেখেই আমাদের খেলতে হবে।’

আইএইচএস/আরআইপি