বিশেষ প্রতিবেদন

ক্রেতাশূন্য আম বাজার

কথায় আছে ‘পাকা আমের মধুর রসে রঙিন করে মুখ’ অথচ বাজারে উপচে পড়া আম থাকলেও তেমন ক্রেতা নেই। কখন ক্রেতা আসবেন সে আশায় হরেক জাতের আম নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। মঙ্গলবার রাজধানীর বাদামতলীতে বাবুবাজারে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

Advertisement

সেখানে দেখা যায়, সকাল থেকেই আমের ঝুড়ি নিয়ে বিক্রেতারা বসে থাকলেও বাজারে চোখে পড়ার মত ক্রেতা সমাগম নেই। যদিও এক বা দুইজন ক্রেতা বাজারে প্রবেশ করছিলেন, বিক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে তাদের নিজ নিজ দোকানে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই সুযোগে ক্রেতারাও দরাদরি করে কম দামে আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা এমন যে পাইকারি বিক্রেতারা কিছু আম বিক্রি করতে পারলেই যেন আপদ থেকে উদ্ধার পান। তাই অনেক পাইকারি বিক্রেতা কম দামেই আম বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বাবুবাজারে ইফাত ফুড এজেন্সির পাইকারি বিক্রেতা রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে আম নিয়ে বসে আসি, বাজারে ক্রেতা নেই। ফলে পানির দামের চাইতেও কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে। এবার আমের বেশি ফলন হওয়ায় দাম কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ঈদের পর আম বাজারে ধ্বস নেমেছে। ১০ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করতে হচ্ছে। এ দামেও বিক্রি হচ্ছে না। তার দোকানে লক্ষণ ভোগ, গুটি আম ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আশ্বিনা, হিমসাগর, আম্রপালীসহ বিভিন্ন জাতের আম ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে সাজিয়ে রেখেছেন। তার উপর বৈরি আবহাওয়াতে কেউ আম কিনতে আসছে না।

Advertisement

এ বাজারে পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, গাছের পাকা আম বাজারে আসলেও মানুষ কিনছে না। আমের মধ্যে ফরমালিন মেশানো আছে এই ভয়ে অনেকে আম খেতে চাচ্ছেন না। প্রতিদিন একশ ট্রে (প্রতি ট্রে ২০ কেজি) বিক্রির কথা থাকলেও সেখানে ৩০ থেকে ৫০ ট্রের বেশি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ঈদের পর থেকেই আম বিক্রি কমে গেছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমের দাম বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

এই বিক্রেতা আরও বলেন, পোকামাকড় থেকে আম পরিষ্কার রাখতে এক ধরণের কেমিক্যাল দিতে হয়। এটি ফলমালিন নয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে। এ কারণে আমের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই চাষী থেকে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

রাজশাহী থেকে নিজের বাগানের বিভিন্ন জাতের ২০০ ট্রে আম বিক্রি করতে বাবুবাজরে এনেছেন সুমন আলী। গত সোমবার রাতে এ আম আনলেও মঙ্গলবারও বিক্রি হয়নি। আম বিক্রি হলে তিনি রাজশাহী ফিরে যাবেন। তাই আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতা খুঁজছেন। গত ৫ বছর যাবত তিনি আমের ব্যবসা করছেন।

সুমন আলী জাগো নিউজকে বলেন, এবার বেশি ফলন হলেও আম ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ১০ টাকা কেজিতেও মানুষ আম কিনছে না। গাছে আম পেকে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই ভাল দামে আম বিক্রির আশায় ঢাকার পাইকারি বাজারে আসলেও এখন খরচ উঠছে না।

Advertisement

হতাশা মেশানো কণ্ঠে তিনি বলেন, এবার আম বিক্রি করে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। গত ৫ বছরেও এমন হয়নি। আম বিক্রি না হওযায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় আম পঁচে যাচ্ছে। প্রতিদিন ঝুড়ি ভর্তি করে তা ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমএইচএম/এমএমজেড/পিআর