দেশজুড়ে

পাহাড় ধসে মাটিচাপা কৃষকের স্বপ্ন

এখন সময় আনারস, লিচু ও কাঁঠাল বিক্রির। অথচ গত ১০ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ইসলামপুর, বুড়িঘাট, কুতুবছড়ি, ঘিলাছড়ি, বগাছড়িসহ বিভিন্ন স্থানের কলা, আনারস, আম, লিচু ও কাঁঠালের প্রায় দুই শতাধিক ফলজ বাগান পাহাড় ধসে নষ্ট হয়ে গেছে। এ সব এলাকার অনেকে বাগানের কিছু ফল ইতোমধ্যে বিক্রি করতে পারলেও অধিকাংশরা আরেকটু সময় নিতে চেয়েছিল। কেউ আবার মৌসুমের শেষে দিকে বিক্রির জন্য অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু কে জানতো? হঠাৎ করে এমন দুর্যোগ তাদের বছর জুড়ে লালিত স্বপ্ন শেষ করে দিবে।

Advertisement

সরজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে, যেখানে রয়েছে মানুষের কষ্টে গড়া স্বপ্নের ফলের বাগান। নানিয়ারচরকে বলা হয় ‘আনারসের রাজধানী’। সেখানে আনারস বেশি চাষ করা হয়। অথচ পাহাড় ধসে আনারস বাগানই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসলামপুর স্থানীয় আনারস চাষি মো. ইমাদুল ইসলাম বলেন, আমার ৫ একর জমি ছিল। সেখানে আমি আনারস চাষ করেছি। কিছু অংশের আনারস বিক্রি করতে পারলেও বাকি আনারসগুলো আরও পরে বিক্রি করবো ভেবেছিলাম কিন্তু পাহাড় আমার সঙ্গে এ কি শক্রতা করলো? আমার যে আর কিছুই রইলো না। প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।

বগাছড়ির কলা চাষি সেলিনা বেগম বলেন, আমি ঋণ ও সুদে টাকা নিয়ে প্রায় ৩ একর জমিতে কলা চাষ করেছিলাম। গত বছর কিছু অংশের ক্ষতি হয়েছিল কিন্তু এবার তো সবই ক্ষতি হয়ে গেলো। ঋণের বুঝা এখন আমার মাথায়, কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ১৩ তারিখ হঠাৎ পাহাড়ি ঢল এসে আমার কলা বাগানের সব গাছ নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা এখনও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পায়নি। আশা করছি সরকার আমাদের একটু সহযোগিতা করবে।

ইসলামপুর ইউপি মেম্বার আব্দুল সালাম বলেন, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে আমার ইউনিয়নের অনেক ফলজ বাগান নষ্ট হয়েছে। আমরা উপজেলা পরিষদ থেকে একটি তালিকা তৈরি করছি। তালিকা তৈরির কাজে আমিও সংযুক্ত রয়েছি। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক পাহাড়ের দুই শতাধিক আনারস বাগানসহ অন্যন্যা ফলজ বাগানে ধস হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, বাগানগুলোর চাষিরা ঋণ নিয়ে কিংবা সুদে টাকা নিয়ে বাগান করে থাকে। এ বর্ষায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাঙ্গামাটির উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের আনারসসহ বিভিন্ন ধরণের ফলজ বাগান প্রায় ১২ হেক্টর জমি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কাজ করছে। এখনও জমির রিপোর্ট হাতে আসেনি। তালিকা করা হলে আমরা জেলা পরিষদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করবো।

Advertisement

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কোয়ালিটি চাকমা জানান, নানিয়ারচর উপজেলায় টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে সকল বাগানে ধস নেমেছে তা আমরা তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করছি দরিদ্র কৃষকদের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারবো।

আরএ/জেআইএম