দেশজুড়ে

ঝুলে আছে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের ভাগ্য

এক সময় কর্মচঞ্চল ছিল ঈশ্বরদী বিমানবন্দর। প্রতিদিনই দুটি করে ফ্লাইট ওঠানামা করতো। কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে লোকশান দেখিয়ে ১৯৯৬ সালে এ বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি রাজশাহীতে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ হয়। এর মধ্যে মাঝখানে মাত্র ৪ মাস চালু করলেও দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ বন্ধ পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ এ বিমানবন্দরটি।

Advertisement

উত্তরাঞ্চলের একসময়ের সবচেয়ে ব্যস্ততম ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে প্রায় দু’দশক ধরে ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম নেই। মাঝে ২০১৩ সালে কিছুদিন বেসরকারি এয়ারলাইন্স এখানে ফ্লাইট দিয়েছিল।

বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্লাইট পরিচালনায় তারা বরাবরই প্রস্তুত। নোটিশ পেলেই পরিচালনা কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হবে না। কিন্তু এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বক্তব্য, ফ্লাইট পরিচালনায় যতটা নিরাপত্তা দরকার, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে তা নেই। দু’দশক ধরে দু’পক্ষের এমন অবস্থানে কার্যত ঝুলে আছে বিমানবন্দরটির ভাগ্য।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট উঠানামা করতো ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে। কিন্তু নানা কারণে ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয় ঈশ্বরদীতে। কিন্তু চার মাসের মাথায় ২০১৪ সালের মার্চ মাসে আবারও বন্ধ হয়ে যায় এখানকার কার্যক্রম।

Advertisement

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জানান, উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য যে প্রশস্ত রানওয়ে দরকার তা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের নেই।

মফিজুর বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়েতে ছোট প্লেন নামতে পারবে। আমাদের যে মডেলের প্লেন রয়েছে তা ল্যান্ডিংয়ের জন্য অন্তত ৯৮ ফুট প্রশস্ত রানওয়ে প্রয়োজন। ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ের প্রস্থ ৭৫ ফুট। তাই আমাদের ইচ্ছে থাকলেও ঈশ্বরদীতে কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

ফ্লাইট পরিচালনাকারী ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কামরুল ইসলাম বলেন, রানওয়ে সংকটের পাশাপাশি ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাও এখানে ফ্লাইট বন্ধ রাখার অন্যতম কারণ।

তিনি জানান, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য যেসব গাড়ি প্রয়োজন তা নেই। এ ছাড়া ইউএস বাংলার ফ্লাইট নামতে অন্তত ১০০ ফুট প্রশস্ত রানওয়ের প্রয়োজন। অথচ ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ে ৭৫ ফুট প্রশস্ত।

Advertisement

তবে এ সব কথা অস্বীকার করেছেন ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুর রশীদ। তার দাবি, অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি না থাকলেও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অন্যসব ব্যবস্থাপনা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রয়েছে।

আব্দুর রশীদ বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ১৯৯৬ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে পুনরায় ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে তা চার মাস চলে। ওই চার মাসে সফলতার সঙ্গে ৫২টি ফ্লাইট ওঠানামা করে এই বিমানবন্দরে। কিন্তু তারপর কোনো এয়ারলাইন্স এখানে আর ফ্লাইট পরিচালনা করেনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত। এক সপ্তাহের নোটিশে ফ্লাইট পরিচালনার সব ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু কেন বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করছে না, তা আমি বলতে পারবো না।

ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৭০০ ফুট। আর প্রস্থ ৭৫ ফুট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তখন বিমানবন্দরটি ‘হিজলি বেস এরিয়া’ নামে পরিচিত ছিল।

ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ইপিজেড, রেলওয়ের বিভাগীয় অফিস, বাংলাদেশ সুগারক্রপ ইন্সটিটিউট, ডাল গবেষণা কেন্দ্রসহ বহু সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব দিক বিবেচনায় ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি আবার চালু করা এখন সময়ের দাবি।

আলাউদ্দিন আহমেদ/আরএ/পিআর