খেলাধুলা

রশিদ খানের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ পার করে এসেছি : তামিম

আচ্ছা ভাই ভারতের দেরাদুনে আমাদের ব্যাটসম্যানরা কি আফগাান লেগ স্পিনার রশিদ খানের দ্রুত গতির লেগ স্পিন আর বিষাক্ত গুগলি ঠিকমতো সামলাতে পারবে? সামনা সামনি, টেলিফোন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এমন প্রশ্ন। আইপিএল যত শেষের দিকে আসছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজও যত এগিয়ে আসছে- এমন সংশয়মাখা প্রশ্ন ততই জোরালো হচ্ছে।

Advertisement

সন্দেহ নেই এ মুহূর্তে আফগানিস্তানের রশিদ খান বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক লেগ স্পিনার। তার লেগ স্পিন আর গুগলি দুই’ই সমান ধারালো ও বিপজ্জনক। যা খেলতে বিরাট কোহলির মতো বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের নাভিঃশ্বাস উঠছে।

কোনটা টার্ন করবে, লেগ মিডল স্ট্যাম্পে পড়ে অফ স্ট্যাম্প সোজা কিংবা টার্ন করে আরও বেরিয়ে যাবে। আর কোনটা উল্টো অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বা অফ স্ট্যাম্প সোজা থেকে ভিতরে ঢুকে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাবে- তা বোঝা সত্যিই দুষ্কর। তাই তো তাকে খেলতে ঘেমে-নেয়ে উঠেছেন বিশ্বের সব বড়বড় ব্যাটসম্যান।

এবারের আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে ২১ উইকেট দখল করে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারী রশিদ খান। আর মাত্র এক সপ্তাহ পর ভারতের দেরাদুনে এ আফগান ভয়ঙ্কর লেগ স্পিনারের মুখোমুখি হতে হবে টাইগারদের।

Advertisement

তাকে খেলা কতটা কঠিন হবে? রশিদ খানকে নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কি ভাবছেন? বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের প্রতিটি ভক্ত ও সমর্থক এ প্রশ্নের উত্তর জানতে উন্মুখ। তারা আশাবাদী হতেই পারেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং স্তম্ভ তামিম ইকবাল রশিদ খানকে নিয়ে ভয়-ডরের কিছু দেখছেন না।

বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলতে আজ লন্ডন যাবার আগে বিকেলে শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে রশিদ খান প্রসঙ্গ উঠতেই তামিম বেশ সাজানো গোছানো কথা বলেছেন।

যার সারমর্ম হলো, ‘রশিদ নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অন্যতম সেরা স্পিনার কাম বোলার। সম্ভবত এখন সে ফর্মের তুঙ্গে। বলের অ্যাকিউরিসি পারফেক্ট। যে কারণে সাফল্যর হারও বেড়েছে বেশি; কিন্তু তাই বলে এমন নয় যে, তাকে খেলা যাবে না। সে ভালো বোলার; কিন্তু আন প্লেয়েবল নয়। আর তাকে নিয়ে বেশি ও নেতিবাচক চিন্তা করলে নিজেদেরই ক্ষতি।

তামিমের শেষ কথা ও উপলব্ধি, রশিদ খান যত বড় আর বিপজ্জনক বোলারই হোক না কেন, তার মানের বোলারকে আগেও খেলেছে বাংলাদেশ। তার চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও পার হয়ে এসেছে। সুতরাং চিন্তার কিছু নেই।

Advertisement

এমন ইনফর্ম ও সফল লেগ স্পিনার এখন সাকিবের সাথে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএল খেলছেন। তার আগে গত বছর বিপিএলে তামিমের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষে খেলে গেছেন। কাজেই সাকিব আর তামিম দুজনই রশিদকে কাছ থেকে দেখেছেন। এটা সহায়ক হলেও তামিম মনে করেন না, সেটাই খুব বড় প্লাস পয়েন্ট।

সাকিবের সঙ্গে রশিদ খানকে নিয়ে এখনো কথা হয়নি তার। তামিম বলেন, ‘তবে গতবছর বিপিএলে রশিদ খান তো তো আমার টিমেও ছিল। একমাস, কুমিল্লার প্র্যাকটিসে, ম্যাচে হোটেলে তাকে দেখেছি; কিন্তু সেটাই তাকে স্বচ্ছন্দে ও সাফল্যের সাথে খেলে ফেলার মূলমন্ত্র নয়। অনেক সময় আপনি কথা বলেন কিছুটা ধারণা পাবেন; কিন্তু এটা না যে সব কিছু আপনি বুঝে যাবেন। যদি তাই হতো তাহলে ও এতো ভালো পারফরম্যান্স আইপিএলে করতে পারত না।’

তামিমের বোধ ও উপলব্ধি, ‘আসলে রশিদ খানকে স্বচ্ছন্দে ভাল খেলার পূর্বশর্ত হলো, নির্দিষ্ট দিনে তাকে ঠিকমতো রিড করা এবং তারচেয়ে বড় হলো পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা। আপনি উইকেটে তাকে কীভাবে রিড করছেন আর কীভাবে তাকে প্ল্যান করে খেলছেন। ওটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি পরিকল্পনা করে, ট্যাকটিক্যালি সব কিছু করে প্রস্তুত থাকতে পারি; কিন্তু যদি মাঠে গিয়ে ঠিকমতো প্রয়োগ করতে না পারি তাহলে কোনো লাভই হবে না। হ্যাঁ ছোট কিছু তথ্য সব সময়ই সাহায্য করে। আসল কথা হলো আপনি নির্দিষ্ট দিনে কিভাবে কাজ করছেন। সেটাই শেষ কথা।’

রশিদ খান কেন এত টাফ? তামিমের ব্যাখ্যা, রশিদ খানের কুইক আর্ম অ্যাকশনটাই একটা ডিফিকাল্ট পার্ট। আর তার সাথে যোগ হয়েছে অ্যাকিউরিসি। দুয়ের সমন্বয়ে এখন তাকে আগের মানে ছয় মাস আগের চেয়েও অনেক কঠিন স্পিনার মনে হচ্ছে। রশিদ খান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাই মুখে এমন কথা তামিমের, ‘আমার কাছে মনে হয় ওর কুইক আর্ম অ্যাকশনটা হচ্ছে মোস্ট ডিফিকাল্ট পার্ট। সাথে যোগ হয়েছে অ্যাকিউরিসি। যেটা ওর ছয় মাস আগেও এত ছিল না। এখন একদম ধারাবাহিকভাবে ভালো জায়গায় বল করছে নিয়মিত। এখন অনেক সাকসেসফুল। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের বিট করছে। খুবই ভালো করছে।’

তবে তাই বলে তাকে খেলাই যাবেনা , বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রশিদ খানকে খেলতেই পারবেন না, তামিম অমন চিন্তা করতে চান না।

তার বোধ ও উপলব্ধি, এমন নয় যে , রশিদকে আমরা খেলতেই পারব না। আমরা যদি নিজেদেরকে ভালো করে এ্যাপ্লাই করি তাহলে কেন না। অবশ্যই ভাল খেলা সম্ভব। আমি একজনেও ওপর ফোকাস করবো সে মানসিকতায় নেই। আপনাকে চিন্তা করতে হবে ওদের দলে আরও ভালোভালো খেলোয়াড় আছে। আরও অনেক ভালো ভালো বোলার আছে। শুধু একজনের পিছনে ফোকাস করলে, আগে থেকেই একটা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে হয়ে যাবে। নো ডাউট ও এখন টি-টোয়েন্টির সেরা বোলারদের একজন। বাট আমি সিউর যে এরকম অনেক চ্যালেঞ্জেস আমরা পাড় করে অনেক ভালো খেলে এসেছি। আশা করছি এবারও পারব।’

তামিমের শেষ কথা, রশিদ খান কেন, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানকে নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনার চেয়ে নিজেদের কথা ভাবাই উত্তম। রশিদ ভাল বোলার। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছে। ঠিক আছে; কিন্তু তার কথা ভাবার চেয়ে আমাদের নিয়ে, নিজেদের সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটানো নিয়ে চিন্তা করলেই বরং বেশি উপকার হবে।’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস