লাল ও গোলাপী রঙে সেজেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার লিচু বাগানগুলো। তাই লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ভিড় করছেন বাগানগুলোতে। চলতি বছর উপজেলার ৮০ হেক্টর জমিতে ১২শ মেট্রিক টন লিচুর চাষ হয়েছে। কালীগঞ্জে রসালো এই ফলটির সব সময়ই ফলন ভালো হয়। তাছাড়া এখানকার বাগানগুলোও আয়তনে বেশ বড়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সংগৃহীত লিচু কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হয় বলেও জানা গেছে।
Advertisement
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মোক্তারপুর, জামালপুর, জাঙ্গালীয়া, নাগরী ও বক্তারপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে লিচুর বাগান ঘিরে এক সাজসাজ রব বিরাজ করছে। লিচু নিয়ে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে উৎসব। লিচু ঘিরে এলাকার সর্বত্রই এখন আলোচনা। কে কত টাকার লিচু বিক্রি করেছে। লিচু গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লাল ও গোলাপী রঙের লিচু। কালীগঞ্জে চায়না-থ্রী, বোম্বাই, ও এলাচী তিন ধরনের লিচুর চাষ হয়। স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতিটি ভালো মানের লিচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে তিন টাকায়।
মোক্তারপুর ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের লিচুচাষি কফিল উদ্দিন বলেন, লিচু গাছে মুকুল আসার আগেই ভালো করে যত্ন নিতে হয়। লিচুর ভালো ফলন পেতে মৌসুম শেষের পরেই গাছে জৈবসারসহ বিভিন্ন প্রকারের সার প্রয়োগ করতে হয়। ফুল ফোটার আগেই গাছে মগডাল ভেঙে দিয়ে গাছের গোড়ায় সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে সবসময়ই ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর ক্ষতিকারক পোকারোধে মুকুল আসা ও কুঁড়ি তৈরির পর বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। গতবারের চেয়ে এবার লিচুর দাম তুলনামূলক বেশি। তাছাড়া ফলনও ভালো হয়েছে।
বক্তারপুর ইউনিয়নের বেরুয়া গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, তাদের গ্রামগুলোতে কৃষকরা বিভিন্ন মৌসুমি ফলের উপর নির্ভরশীল। এরমধ্যে লিচু চাষের উপর বেশি। সারা বছরই লিচু গাছের যত্ন নেন তারা। এসব গ্রামের উঁচু চালাযুক্ত জমি হওয়ায় অন্যান্য ফসল তেমন হয় না। ফলে আবাদী-অনাবাদী সব জমিতেই লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
Advertisement
মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মুকুল থাকা অবস্থায় লিচু বাগান কিনে শ্রমিক দিয়ে গাছের চারার যত্ন নিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে।
কালীগঞ্জ বাজারের লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফ মিয়া বলেন, কালীগঞ্জের লিচুর গুণগত মান ভালো ও রসালো হওয়ায় রাজধানীতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বাগান থেকে সংগৃহীত লিচু ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করে থাকি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার আবু নাদির এসএ সিদ্দিকী জানান, কালীগঞ্জে বন্যামুক্ত ও জমি উঁচু চালা সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত লিচু রসালো ও সুস্বাদু। গত বছর স্থানীয়ভাবে কৃষকদের লিচু চাষে দিক নির্দেশনা দিয়ে ৭৭ হেক্টর জমিতে ১১শ ৪৪ মেট্রিক টন লিচু চাষ হয়েছিল। আর এ বছর ৮০ হেক্টর জমিতে ১২শ মেট্রিক টন লিচু পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/এমএস
Advertisement