দেশজুড়ে

ধ্বংসের পথে মহাকবি মধুসূদনের মামার বাড়ি

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ও হারিয়ে যেতে বসেছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত পাইকগাছার কাটিপাড়াস্থ মামার বাড়ি। স্থানীয়দের মতে তৎকালীন সময়ে কবি তার মামার বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যদিও জন্মের এ বিষয়টি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। জন্ম যেখানেই হোক মামার বাড়ি কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। এটি সংরক্ষণে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

Advertisement

সূত্রমতে, বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয় কবির সাহিত্য জীবন। মাত্র ৫ বছরের ব্যাবধানে তিনি একে একে রচনা করেন মহাকাব্য তিলোত্তমাসম্ভব, মেঘনাদবধ, ব্রজ্ঞাঙ্গনা, বীরঙ্গনা, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, একেই কি বলে সভ্যতা, কৃষ্ণ কুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো ইত্যাদি নাটক ও প্রহসনসহ বিভিন্ন কাব্য ও কবিতা।

মহাকবি মধুসূদন দত্ত স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের জলকে মায়ের দুধের সঙ্গে তুলনা করে এবং তাকে চির অমর করে রাখার জন্য রচনা করেছিলেন বিখ্যাত সনেট 'কপোতাক্ষ নদ'। সনেট মধুসূদনের সাহিত্য জীবনে এক অতি মূল্যবান অমর সৃষ্টি, সনেট কবিতার জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যাকাশে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন যশোর জেলার কেশবপুর থানার কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ী গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার। মা জাহ্নবী দেবী ছিলেন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া গ্রামের গৌরীচরণ ঘোষের মেয়ে। মামার নাম বংশী লাল ঘোষ। বেশির ভাগ সূত্রমতে সাগরদাঁড়ীকেই কবির জন্মস্থান হিসেবে দাবি করা হয়। তবে স্থানীয়দের মতে মামার বাড়িতেই কবি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

Advertisement

মামার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা শংকর দেবনাথ জানান, তৎকালীন সময়ে বেশিরভাগ নারীরা পিত্রালয়েই সন্তান প্রসব করতেন। এছাড়া এলাকার প্রবীণদের মধ্যে এখনও যারা জীবিত রয়েছেন তারা সবাই কবি মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে অভিমত দিয়েছেন। সর্বোপরী জন্ম যেখানেই হোক মহাকবি মাইকেলের শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোর মধ্যে তার মামার বাড়ি অন্যতম। তৎকালীন সময়ে কবির মামার বাড়ির মন্দিরে প্রত্যেক বছর দোল উৎসব উদযাপিত হতো। আর এ উৎসব উপভোগ করতে কবি তার মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে আসতেন। এমনকি ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার পরও কবি সর্বশেষ একবার তার মামার বাড়িতে এসেছিলেন।

এলাকায় প্রচলন আছে, খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করায় মামার বাড়ির নারীরা তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। কাছারি বাড়িতেই কবিকে বসতে এবং খেতে দেওয়া হয়। বর্তমানে কবির মামাদের মূলবাড়িটি যেখানে ছিল সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখনও অরক্ষিত অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্মৃতি বিজড়িত ৩টি মন্দিরের অংশ বিশেষ। ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয় মন্দির ৩টি। যার একদিকে রয়েছে দোল মন্দির এটি সবচেয়ে সু-উচ্চ। মাঝে রয়েছে শিব মন্দির ও তার পরেই রয়েছে চণ্ডী মন্দির। সংরক্ষণের অভাবে মন্দিরগুলোও ধ্বংস হতে চলেছে।

তাই এলাকাবাসীর দাবি কবির স্মৃতিবিজড়িত মামার বাড়ির শেষ স্মৃতিটুকু হারিয়ে যাওয়ার আগেই সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার কবির সাগরদাঁড়ীর স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি ইতোমধ্যে সরকারি ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সেটি ধ্বংস হওয়ার আর কোনো সম্ভবনা নেই। তবে মামার বাড়িটিও স্মৃতি বিজড়িত স্থানের মধ্যে অন্যতম। এটিও সংরক্ষণ করা সরকারের দায়িত্ব।

সচেতন এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে কবির স্মৃতিবিজড়িত মামার বাড়ির সকল স্মৃতি, সকল স্থাপনা সংরক্ষণ করে এখানেই গড়ে তোলা হোক পর্যটন কেন্দ্র। এ ব্যাপারে সরকার ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

Advertisement

আলমগীর হান্নান/এফএ/এমএস