প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ফ্রিডম পার্টির ১১ কর্মীকে ২০ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঘটনার ২৮ বছর পর গতকাল রোববার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জাহিদুল কবির ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে এই রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে চারজন কারাগারে, তিনজন পলাতক এবং অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) আবদুর রশিদ, এইচ কবির ওরফে হুমায়ুন কবির ও জাফর আহমেদ ওরফে মানিক পলাতক। তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আত্মসমর্পণের পর সাজা কার্যকর করা হবে।
Advertisement
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি দল গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন বাসায় ছিলেন। ফ্রিডম পার্টি ও ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের নির্দেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়। এই হামলায় বাড়ির দেয়াল ও জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিরাপত্তাকর্মীও আহত হন। হামলাকারীরা 'কর্নেল ফারুক-রশীদ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বার বার হামলার টার্গেট হয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশ অবস্থান করায় বেঁচে যান। কিন্তু চক্রান্তকারীরা থেমে থাকেনি। বার বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা যে কতটা সক্রিয় ছিল তার প্রমাণ এই মামলার রায়। শুধু তাই নয় নানা অপশক্তিও শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ন্যক্কারজনক এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন দুই শতাধিক।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধুর গড়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির। এরপর ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের পথ পেরিয়ে ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাসীন করেন। তার নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ অনেক মাইলফলক অর্জন হয়েছে এরই মধ্যে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখে উন্নয়ন অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তথ্য-প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে পদ্মা সেতু। দেশ-বিদেশে নিজ মেধা ও প্রজ্ঞার গুণে নিজেকে নিয়ে গেছেন নেতৃত্বের অনন্য উচ্চতায়। দেশকে এগিয়ে নেয়ার সংগ্রামে যেমন নেতৃত্ব দিতে হবে তেমনি ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁতও ভেঙে দিতে হবে। যে কোনো অন্যায়ের বিচার হওয়াটাই আইনের শাসনের পূর্বশর্ত। শেখ হাসিনা হত্যা প্রচেষ্টার রায় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশিত। এজন্য পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
Advertisement
এইচআর/জেআইএম