‘চল যাই, ঘুড়ি ওড়াই। অই দোস্ত, যাবি না।’ আনুমানিক সাত-আট বছর বয়সী একটি শিশু সমবয়সী আরেক শিশুকে ঘুড়ি ওড়াতে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছিল। শিশুটি হাতে ঘুড়ির নাটাই ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অদূরে দাঁড়িয়ে তার চেয়ে বয়সে একটু বড় অপর পাশে দাঁড়ানো শিশুটির নাটাই থেকে দ্রুত সুতা পাঁকাচ্চিল। ওদের কথাবার্তা শুনে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক রাস্তার ওপার থেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, সুতা মাঞ্জায় কী কী দিছস্? যে ছেলেটি সুতা পাঁকাচ্চিল সে উত্তরে বলে ওঠে যা লাগে দিসি, সবই দিছি আঙ্কেল।
Advertisement
সোমবার বিকেল ৪টায় গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের লেকের পাড়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। শুধু গুলশান লেকপাড়ে নয়, গত দু-তিনদিন যাবৎ হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে মৃদু বাতাসে যান্ত্রিক নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ও বাসা-বাড়ির ছাদে অসংখ্য শিশুকে ঘুড়ি ওড়ানোর খেলায় মেতে উঠতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মাঠে ও বাড়ির ছাদে বিকেল হতেই ছোটছোট শিশুদের নাটাই হাতে বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি ওড়াতে দেখা গেছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে লালবাগের খাজে দেওয়ানের বাসিন্দা সুজাত আলী বলেন, ‘অহনকার পোলাপাইন আর কি ঘুড়ি ওড়ায়। আমাগো আমলে স্কুলের টিফিনের টাকা সঞ্চয় করে ভালো মানের সুতা, সিরিস, কাচের গুঁড়া ও রং দিয়া দিনভর সুতা মাঞ্জা দিয়া পাল্লা দিয়ে ঘুড়ি উড়াইতাম ও কাটাকাটি খেলতাম। কত ধরনেরই ঘুড্ডি-অমুক বাড়ি তমুক বাড়ির ঘুড্ডি কিন্না আনতাম। অহনকার পোলাপাইনেরা খালি কম্পিউটারে গেম খেলে।’
Advertisement
গুলশান-গুদারাঘাটে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল স্বপন নামের এক শিশু। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে স্বপন জানায়, তার বড় ভাই একসময় ঘুড়ি ওড়াত। স্কুলের এক বন্ধুর মুখে ঘুড়ি ওড়ানের গল্প শুনে বাসায় এসে বড় ভাইয়ের কাছে ঘুড়ি-নাটাই কিনে দেয়ার আবদার জানায় সে। এরপর গতকালই তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ঘুড়ি কিনে দেন তার ভাই। ঘুড়ি ওড়াতে ভীষণ ভালো লাগছে বলে জানায় স্বপন।
এমইউ/জেডএ/বিএ