দেশজুড়ে

যেন ‘যুদ্ধবিধস্ত মহাসড়ক’, দেখার কেউ নেই

যেন ‘যুদ্ধবিধস্ত মহাসড়ক’, দেখার কেউ নেই

সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক যেন যুদ্ধবিধস্ত সড়ক। সড়কটির প্রায় ৫০০ মিটার অংশ এখন ‘গলার কাঁটা’। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। জমে আছে পানি। বেহাল এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও কারও যেন মাথাব্যথা নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কটির অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে।

Advertisement

বুধবার (৯ জুলাই) নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল পয়েন্টে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সমন্বয়হীনতায় সড়কের এই হাল বলে অভিযোগ উঠেছে।

সড়কটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আশুলিয়া বাইপাইল এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘‌একটা সভ্য দেশে এমন সড়ক কি থাকতে পারে? হয়তো কোনো পাপ করেছি, তার ফল ভোগ করছি এখন। এসি রুমে বসে থাকা মানুষগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন সড়ক সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে না, তখন লেপশেপ (যেনতেন কাজ) দিয়ে কাজ করে যায়। এখন প্রয়োজন তাদের খবর নেই। এলাকাবাসী ফোন করলেও ‘দেখছি’ বলে দায়িত্ব শেষ করেন তারা।’

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, সড়কের গর্তে চাকা পড়ে হরহামেশাই উল্টে যাচ্ছে গাড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে যানজট। আতেঙ্ক এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়।

আরও পড়ুন

অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন, ভূমিকম্পে বড় ক্ষতির শঙ্কা সারেনি পুরোনো ক্ষত, বন্যায় ফের জর্জরিত পরশুরাম যাত্রী কম খরচ বেশি, মাসে লোকসান ৫০-৬০ লাখ

ওয়েলকাম পরিবহনের চালক সুরুজ বলেন, ‘মাত্র ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’

আরেক পথচারী আবির বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির এমন অবস্থা হবে, তা কেউ চিন্তাও করেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত চারটি ট্রাক-বাস, ১০টির বেশি রিকশা উল্টে গেছে।’

Advertisement

সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ বিভাগ। তবে গতবছর থেকে সড়কটির নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল পয়েন্টে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। একে অপরকে দায় দিয়েই দায় সারছেন তারা। সংস্কারের উদ্যোগ নেই কারও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (মানিকগঞ্জ বিভাগের নয়ারহাট সড়ক) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা বলেন, মহাসড়কের এই অংশটুকু সেতু কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। তাদের কাজ চলার কারণে মাঝে মাঝে সড়কের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি যেন দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।

আরও পড়ুন

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকে ‘ভারাক্রান্ত’ ২২৪ বিদ্যালয় এখনো ‘সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে’ আওয়ামী চক্র, অন্তর্কোন্দল ঘিরে অস্থিরতা সিলেটে সুপারির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০০ টাকা

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। আশা করছি খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ কিন্তু ওপরে, নিচে না। তবুও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রিকুয়েস্ট করে সংস্কার করার জন্য বলা হয়েছে। আশা করি দ্রুত তারা ব্যবস্থা নেবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। পরে আরও চার বছর অতিরিক্ত সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়।

২০২২ সালের ১২ নভেম্বরে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩৭ শতাংশ। আর সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।

এসআর/জেআইএম