কক্সবাজারের রামু উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল গর্জনিয়ার দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান জিন্নাত আলী। ১৯ বছর বয়সী এই যুবকের উচ্চতা ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। শুধু দৈহিক ভাবেই নয়, বৈচিত্র্য রয়েছে তার পায়েও। তার ডান পা বাম পায়ের চেয়ে দুই ইঞ্চি বড়।
Advertisement
চিকিৎসকদের মতে, জিন্নাতের বয়সী ছেলেরা সাধারণত ৫ থেকে সাড়ে ৫ ফুট লম্বা হয়। কিন্তু তার এই বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। মাথায় টিউমার ও ডান পায়ে পচন ধরেছে। ডান পায়ের চেয়ে বাম পা দুই ইঞ্চি খাটো।
তার বাবা আমির হামজা বলেন, ছেলে এমনিতে লম্বা তা নয়। রোগের কারণে তার অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন- এই রোগের নাম জাইগানটিজম। মাথায় টিউমারের কারণে শরীরের হরমোনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে শরীর দ্রুত বাড়তে থাকে। এদেশে এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং রোহিঙ্গাদের রোগ প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়কারী ডা. মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, জাইগানটিজম বা দৈত্যকার মূলত একটি টিউমার সংক্রান্ত রোগ। শরীরে অবস্থানকারী টিউমারের প্রভাবে অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে দেহ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। স্তর ভেদে চিকিৎসার মাধ্যমে টিউমারটি সরিয়ে ফেললে এ রোগ সেরে ওঠে।
Advertisement
জিন্নাত আলী জানান, অস্বাভাবিক উচ্চতার কারণে সবদিক দিয়ে অসুবিধা হয় তার। ঘরে ঢুকতে বা অন্যান্য কাজে সমস্যা হয়। এলাকায় হাঁটা-চলা করতে গেলে সবাই তাকিয়ে থাকে। এছাড়াও তার বড় সমস্যা শারীরিক দুর্বলতা। দুই হাঁটুতে ব্যথা। শারীরিক গড়নের কারণে তার ক্ষুধার তীব্রতাও বেশি। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে খেতে পান না। পায়ের মাপের জুতা বাজারে না পাওয়ায় খালি পায়ে হাঁটতে হয় তাকে।
জিন্নাত আলীর মা শাহপুরা বেগম জানান, ছেলেটি বেশি খাবার চায়। কিন্তু তার চাহিদা মতো খাদ্য জোগান দিতে পারি না। এটি বেদনাদায়ক। তার শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। মাথায় টিউমার ও ডান পায়ে পচন ধরেছে। ডান পায়ের চেয়ে বাম পা দুই ইঞ্চি খাটো। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করানোও সম্ভব হচ্ছে না। ভিটে মাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদও নেই আমাদের।
জিন্নাত আলীর বাবা আমির হামজা জানান, ছেলে লম্বা হওয়ার কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়াও মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। রিকশা, সিএনজি, মাইক্রো, জিপ গাড়িতে বসানো কষ্টকর। চিকিৎসার জন্য গত বছর স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা পরীক্ষার পর ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয় তাকে। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসার কিছুই করা হয়নি। ফিরে আসা হয় বাড়িতে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলেটির বয়স কম হলেও রোগের কারণে তার শারীরিক উচ্চতা অস্বাভাবিক বলে শুনেছি। পরিবারের দুরাবস্থার কারণে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। মা-বাবা ও স্থানীয়দের হয়ে এই লম্বা ছেলেটিকে বাঁচানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
Advertisement
অপরদিকে স্থানীয় নিজাম উদ্দিন, ইব্রাহিম খলিল, মুফিজুর রহমান ও জিয়াউদ্দিন জিয়াসহ এলাকাবাসীর দাবি, রোগ কিংবা স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক যেভাবেই হোক জিন্নাত এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষ। কিন্তু গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা মানুষের কথা থাকলেও বাংলাদেশ বা বিশেষ কোনো দেশের সবচেয়ে লম্বা বা বেটে মানুষ সম্পর্কে আলাদা করে কোনো তথ্য কোথাও নেই।
গিনেজ বুকের তথ্য অনুসারে বর্তমান পৃথিবীর জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা তুরস্কের সুলতান কোসেন’র উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। সবচেয়ে লম্বা নারী চীনের ইয়াও ডিফেন’র উচ্চতা ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে লম্বা ১০ জনের তালিকায় দশম ব্যক্তিটি কোরিয়ান রি মিয়ংহুন। তার উচ্চতা ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর রামুর গর্জনীয়ার জিন্নাত আলীর উচ্চতাও ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি। তাই তিনিও গিনেজ বুকে ১০ নম্বরে যৌথভাবে স্থান পেতে পারেন। আর বাংলাদেশে এতদিন সর্বোচ্চ লম্বা মানুষটি ছিলেন ভোলা জেলার মোসলেউদ্দিন। তার উচ্চতা ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি বলে তথ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াজ উল আলম বলেন, কেউ বিষয়টি এতদিন নজরে আনেনি। এখন জানলাম। দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার এই যুবককে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম