কৃষি ও প্রকৃতি

ছাগলের বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকার : শেষ পর্ব

আজ ছাগলের ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিকার বিষয়ে শেষ পর্ব আলোচনা করা হলো-

Advertisement

৫. ধনুষ্টংকার ধনুষ্টংকার মানুষসহ সব গৃহপালিত পশুর ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় দেশে এ রোগ দেখা যায়। ছাগলের সাধারণত খাসি করানো, প্রসব বা অন্য কোন গভীর ক্ষতের কারণে এ রোগ হতে পারে।

লক্ষণএ রোগে দেহের বিভিন্ন অংশের মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায়। ফলে পশুর দাঁতে কপাট লাগে, মাংসপেশীর কম্পন ও খিচুনি দেখা যায়, প্রস্রাব-পায়খানা হয় না, যেকোন শব্দে চমকে ওঠে, শেষ অবস্থায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।

প্রতিরোধখাসি করানো বা অন্য কোন অস্ত্রোপচারের আগে ধনুষ্টংকারের টিকা দিতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যেকোন অস্ত্রোপচার করতে হবে।

Advertisement

প্রতিকারসাধারণত এ রোগের চিকিৎসায় তেমন ফল হয় না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে ক্ষতস্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে এবং মাংসে এটিএস ইনজেকশন দিতে হবে। তাছাড়া উচ্চমাত্রায় পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। মাংসপেশী শিথিল করার জন্য ক্লোরাল হাইড্রেড ও ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ইনজেকশন দিতে হবে।

আরও পড়ুন- ছাগল পালনে স্টল ফিডিং পদ্ধতি

৬. বাদলাএ রোগ একধরনের গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। বেশি প্রোটিনযুক্ত খাদ্য এ রোগের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া ছাগলের লেজ কাটা, খাসি করানো, পশম ছাটা ও প্রসবকালীন ইত্যাদি ক্ষতের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু দেহে প্রবেশ করতে পারে।

লক্ষণএ রোগে আক্রান্ত ছাগল হঠাৎ কোন লক্ষণ প্রকাশ করার আগেই মারা যায়। এ রোগে পায়ের মাংসপেশী আক্রান্ত হয় বলে ছাগল হাঁটতে পারে না বা খুঁড়িয়ে হাঁটে। আক্রান্ত মাংসপেশীতে চাপ দিলে পচপচ শব্দ হয়। জ্বর, ক্ষুধামন্দা, পেটে গ্যাস ও অবসাদ ভাব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।

Advertisement

প্রতিরোধআক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত পশু মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে। প্রতিবছর টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতিকাররোগ দেখা দেওয়া মাত্রই এ রোগের চিকিৎসা করা উচিত। অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে পেনিসিলিন বা টেট্রাসাইক্লিন দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়।

৭. ফুট রট এর ফলে ছাগলের ক্ষুরের গোড়ায় ঘা হয়। কখনও কখনও সামান্য জ্বর হতে পারে। আক্রান্ত স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। অনেক সময় ছাগীর ওলানেও এই প্রদাহ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রতিরোধ :ছাগলের পা নিয়মিত ১০ % জিন্ক সালফেট দ্রবণে চুবানোর মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতিকারসালফাডিমিডিন, পেনিসিলিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন মাংসে ইনজেকশন করতে হবে। আক্রান্ত পা ৫% কপার সালফেট দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট দিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিতে হবে।

৮. সালমোনেলোসিস সালমোনেলা প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের জীবাণু পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে এক ছাগল থেকে অন্য ছাগলে ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণএ রোগে বাচ্চার রক্তযুক্ত ডায়রিয়া বা আমাশয়, প্রচণ্ড জ্বর, খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া এবং ঝিমুনিভাব হয়। বাচ্চাসহ বয়স্ক ছাগলও মারা যেতে পারে এবং ছাগলের গর্ভপাত হতে পারে।

প্রতিরোধখামারে ছাগলকে তাজা খাদ্য ও পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে। আক্রান্ত ছাগলকে দ্রুত সুস্থ ছাগল থেকে আলাদা করতে হবে।

প্রতিকারসালফার জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো, মুখে এবং শিরায় স্যালাইন ইনজেকশন করতে হবে।

আরও পড়ুন- ব্ল্যাক বেঙ্গল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাবে হিমায়িত বীজ

৯. নিউমোনিক পাসচোরেলোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। রোগটি সব বয়সের ছাগলে দেখা যায়। ছাগলের খামারে অতিরিক্ত গরম, অধিক ছাগল একসঙ্গে পালন, বাতাস চলাচলে অসুবিধা, পরিবহন ইত্যাদি কারণে এ রোগ বেশি হতে পারে।

লক্ষণএ রোগে ছাগলের জ্বর, শ্বাসকষ্ট, খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, অস্থিরভাব দেখা যাওয়া, এমনকি ছাগল হঠাৎ করে মারাও যেতে পারে। ছাগলের বিভিন্ন জয়েন্ট, ওলান, মেনিনজিস এবং ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

প্রতিরোধখামারে ছাগলকে খাদ্যের সঙ্গে টেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। ছাগলের খামারে অতিরিক্ত গরম, অধিক ছাগল একসঙ্গে পালন, বাতাস চলাচলে অসুবিধা ইত্যাদি কারণসমূহ দূর করতে পারলে এ রোগের সংক্রমণ কমে যেতে পারে।

প্রতিকারএমোক্সিসিলিন বা সিপ্রোফ্লক্সাসিলিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো এবং শিরায় স্যালাইন ইনজেকশন করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রদাহরোধী ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।

এসইউ/জেআইএম