অর্থনীতি

বীমায় আগ্রহ কম বিদেশি বিনিয়োগকারীদের

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত বীমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়া এবং আর্থিক ভিত দুর্বল হওয়ার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ খাতের শেয়ারের প্রতি আগ্রহ কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

তারা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালোভাবে পর্যালোচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের বিনিয়োগ সাধারণত ব্লু চিপ (ভালো মৌলভিত্তি) কোম্পানিতে হয়ে থাকে। কিন্তু দেশের সিংহভাগ বীমা কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি খুব একটা শক্ত নয়। দু-একটি বাদে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের আয় ও লভ্যাংশের ক্ষেত্রে খুব একটা ধারাবাহিকতা নেই।

এছাড়া বীমা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে প্রায়ই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। বীমা খাতের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলেও সেটা খুবই দুর্বল। যে কারণে বীমা কোম্পানিগুলো খুব একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আসছে না। ফলে বীমা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম- এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৪৭টি বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে মাত্র নয়টি কোম্পানিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে। এ নয়টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় কমে গেছে। আর তিনটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ আগের অবস্থানেই রয়েছে। বর্তমান বাজার দরে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ১১০ কোটি ৮৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

Advertisement

বীম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিদেশিদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আছে গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে। সেপ্টেম্বর মাস শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের আট দশমিক ২৫ শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের হাতে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষেও প্রতিষ্ঠানটির একই পরিমাণ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে।

গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের মোট শেয়ার সংখ্যা আট কোটি ছয় লাখ ৯১ হাজার ১৮৭টি। সে হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির ৬৬ লাখ ৫৭ হাজার ২৩টি শেয়ার আছে বিদেশিদের কাছে। বর্তমান বাজার দরে শেয়ারগুলোর মোট মূল্য ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ছয় হাজার টাকা। অর্থাৎ এ সাধারণ বীমা কোম্পানিটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ছয় হাজার টাকা।

এর পরেই রয়েছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে নয় কোটি ৭৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের দুই দশমিক ৩১ শতাংশ বা ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৮টি রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির কোনো শেয়ার বিদেশিদের হাতে ছিল না। অর্থাৎ ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের শেয়ার নতুন করে কিনেছেন বিদেশিরা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদেশিরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে। যে কোম্পানি থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে, তারা সাধারণত সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন।

Advertisement

বর্তমান বাজার দরে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে এক কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর মাস শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের এক দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষেও বিদেশিদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির একই পরিমাণ শেয়ার ছিল। তবে জুলাইয়ে বিদেশিদের সিটি জেনারেলের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। জুলাই শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের এক দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে।

বাংলাদেশ ন্যাশনালে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের দশমিক ১৮ শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষে বাংলাদেশ ন্যাশনালের দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমে তিন ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া চলতি বছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমা অন্য বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ১৫ লাখ ২১ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের দশমিক ১৬ শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষে কোম্পানিটির দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে।

প্রাইম ইসলামী লাইফে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ১৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের দশমিক শূন্য নয় শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষে কোম্পানিটির দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে। অর্থাৎ প্রাইম ইসলামী লাইফে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে নয় লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের দশমিক ১১ শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষে কোম্পানিটির দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার ছিল তাদের হাতে। অর্থাৎ তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সেও বিদেশিদের বিনিয়োগ কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।

বিদেশিদের কাছে শেয়ার থাকা বাকি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পপুলার লাইফে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে ৯২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের দশমিক ২১ শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষেও বিদেশিদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির একই পরিমাণ শেয়ার ছিল।

আর কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সে বিদেশিদের বিনিয়োগ আছে দুই লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের দশমিক শূন্য তিন শতাংশ রয়েছে বিদেশিদের কাছে। ২০১৬ সাল শেষেও কোম্পানিটির একই পরিমাণ শেয়ার ছিল বিদেশিদের কাছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, বীম খাতের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায় না- এমন আশঙ্কা থেকেই হয় তো বিদেশিরা বীমা খাতের কোম্পানিতে খুব একটা বিনিয়োগ করে না। এছাড়া বীমা খাতে বেশ বিশৃঙ্খল। এ খাতের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলেও সেটা খুব একটা কার্যকর না। ফলে বীমা কোম্পানিগুলোতে সুশাসনের অভাব রয়েছে।

এমএএস/এমএআর /এমএস