বিশেষ প্রতিবেদন

সাংবাদিক নেতারাই বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (একাংশ) সভাপতি। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। রাজনীতির কারণে কয়েক দফা কারাবরণও করতে হয়। সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। ষাটের দশকের একজন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিংড়ে লিখেছেন বই, অসংখ্য প্রবন্ধ।

Advertisement

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সমকালীন রাজনীতি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাসুদ রানা। দুই পর্বের ধারাবাহিকের শেষটি আজ প্রকাশিত হলো।

জাগো নিউজ : আপনার কারণে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণায় বিলম্ব হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের একটি অংশ আন্দোলন করছে। আপনারা বলছেন, নতুন ওয়েজ বোর্ড গঠনে আপনারা মালিকপক্ষের প্রতিনিধি পাচ্ছেন না। ওয়েজ বোর্ড গঠনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাচ্ছি?

হাসানুল হক ইনু : নতুন ওয়েজ বোর্ড আমরা অবশ্যই দেব। আমরা মালিকপক্ষের প্রতিনিধি এখনও পাইনি। এজন্য আমাদের ঘোষণা বিলম্ব হচ্ছে। মালিকরা বলেছেন, প্রতিনিধি দেব কিন্তু দিচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত মালিকপক্ষ যদি প্রতিনিধি না দেয় সে ক্ষেত্রেও আইনের একটি বিধান আছে। এক্ষেত্রে সরকার মালিক প্রতিনিধি মনোনয়ন দেবে। তবে এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেয়া উচিত এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দেরও পরামর্শ নেয়া উচিত। আমরাও কার্যকর ওয়েজ বোর্ড চাই।

Advertisement

যেখানে আমরা আন্তরিক, এরপরও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ কেন রাস্তায় বসে থাকবেন আমি বুঝি না। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। আমরা মনে করি, এখন থেকে কাজ শুরু করলে সবকিছু নিষ্পত্তি করতে ৫-৭ মাস লাগবে। সেজন্য প্রক্রিয়াটা আগে থেকে শুরু করেছি। কিন্তু মালিকপক্ষ এটা পছন্দ করে না।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ যে সমালোচনাটা করছেন, আমি মনে করি এটা সঠিক নয়, বিভ্রান্তিকর। তাদের অন্য কোনো ব্যাপার আছে। তারা কি ওয়েজ বোর্ড চান নাকি তথ্যমন্ত্রীর রাজনীতির ব্যাখ্যা চান? আমার কাছে তো ওয়েজ বোর্ড দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিক নয়, সাংবাদিক নেতাদের কাছে তথ্যমন্ত্রীর অপসারণ গুরুত্বপূর্ণ! তবে সেটা প্রধানমন্ত্রী, সরকার বিবেচনা করবেন। সেটা আমার ব্যাপার নয়, আমার ব্যাপার ওয়েজ বোর্ড তৈরি করে দেয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবহিত আছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও আমি (তথ্যমন্ত্রী) এ ব্যাপারে একমত আছি। সেখানে তারা (আন্দোলনকারী সাংবাদিক নেতারা) বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন।

কত শতাংশ পত্রিকা অষ্টম ওয়েজ বোর্ড দিচ্ছে, ৯৫ শতাংশ সাংবাদিক ভাইবোনে ওয়েজ বোর্ড পান না। আমার মনে হয় কীভাবে পাওয়া যায় সেই বুদ্ধি ওনাদের করা উচিত, মন্ত্রী হিসেবে আমারও করা উচিত।

Advertisement

ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে ওয়েজ বোর্ড করার জন্য বেতন কাঠামোর একটি প্রস্তাব সাংবাদিক বন্ধুরা আমাদের দিতে পারেননি। বেতন তো আমি দেব না। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকদের সম্মতিতে একটা বেতন কাঠামো প্রস্তাব না করলে আমি কি হাওয়ার ওপর ওয়েজ বোর্ড দেব?

অনলাইন সাংবাদিকদের কী হবে- এসব জটিল প্রশ্নের উত্তর তো সাংবাদিক নেতারা দেবেন। তাই আমি বলেছিলাম, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আসা উচিত। সেজন্য একটা কাজ করেন, সাহায্য করেন। সেই সাহায্যটা কি হচ্ছে? ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকদের সঙ্গে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বসে একটা কাঠামো তৈরি করে দেবে তো। সেই কাঠামো ছাড়া আমি কীভাবে সাজাব?

জাগো নিউজ : অনলাইন নীতিমালা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অনলাইন গণমাধ্যম সম্প্রচার কমিশনের অধীনে থাকবে। কিন্তু সম্প্রচার আইনের তো খবর নেই।

হাসানুল হক ইনু : অনলাইন নীতিমালা অনুযায়ী সম্প্রচার কমিশনের অধীনে অনলাইনগুলো চলে যাবে। যতদিন কমিশন না হচ্ছে ততদিন মন্ত্রণালয় কাজগুলো করবে।

অনলাইন পত্রিকার তথ্যপুঞ্জী করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া নিবন্ধনের জন্য ১৮০০ আবেদন পড়েছে। সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দিয়েছি, তারা সেগুলো পরীক্ষা করছে। নিবন্ধনের কাজটা সম্প্রচার কমিশন করবে। নিবন্ধন হলে সনদ পাবে।

সম্প্রচার কমিশনে অনলাইন দেখার জন্য আলাদা উইং থাকবে। মনিটরিংয়ের দায়িত্বও থাকবে তাদের হাতে। আশা করছি, আগামী শীতকালীন অধিবেশনে সম্প্রচার আইন পাস হবে। এই আইনেই কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।

জাগো নিউজ : দেশে অনেকগুলো টেলিভিশন চ্যানেল, এটা নিয়ে এমনিতেই সমালোচনা। নতুন করে আর কোনো চ্যানেল অনুমোদন দেবে কি না সরকার?

হাসানুল হক ইনু : (টেলিভিশন চ্যানেল) যে চাইবে সরকার বিবেচনা করলে দেবে। সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কেউ যদি মনে করেন টিভি লাইসেন্স নিয়ে তিনি ব্যবসা করতে পারবেন, করেন। না করতে পারলে আমার কি? আমরা তো কাউকে জোর করে দিচ্ছি না।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য দুই শতাধিক আবেদন জমা রয়েছে। অনলাইন পত্রিকার ১৮০০ আবেদন আছে। বাংলাদেশের সব নাগরিকই একটা করে টিভি লাইসেন্স চায়।

আরএমএম/এমএআর/এমএস