টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যায় জড়িত থাকার ঘটনায় গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
Advertisement
টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম কিবরিয়া, মো. আমিনুল ও মো. সামছুল হকের আদালতে পৃথক এ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। টাঙ্গাইল কোর্ট ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার মধুপুরে চলন্ত বাসে এক নারীকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে। ময়মনসিংহ জেলা মির্জাপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে আকরাম, এমদাদুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও ময়মনসিংহ জেলা মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ি গ্রামের খোরশেদের ছেলে শামীম হোসেন এ ঘটনায় জড়িত বলে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে অপর দুই আসামি হাবি ও গেন্দু মধুপুর থানায় আটক থাকলেও তারা এখনও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। তাদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান মধুপুর থানা পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম।
Advertisement
মধুপুর থানা পুলিশের ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে শুক্রবার রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন ওই তরুণী।
ওই বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বিবরণ পাওয়া যায়।
পুলিশ ও ওই তরুণীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রুপা বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। রাত ১০টা পর্যন্ত রূপার সঙ্গে তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিকের মুঠোফোনে যোগাযোগ ছিল।
কিন্তু এর পর থেকে রূপার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় বলে জানান হাফিজুর। পরদিন শনিবার কোনো খোঁজ না পেয়ে হাফিজুর ময়মনসিংহ যান এবং ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
Advertisement
শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল থেকে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার টাঙ্গাইলে ময়নাতদন্ত শেষে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে অজ্ঞাত পরিচয় মরদেহ হিসেবে তা দাফন করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাফিজুর গতকাল সোমবার রাতে মধুপুর থানায় যান। সেখানে মরদেহের ছবি দেখে তার বোন রূপার বলে শনাক্ত করেন তিনি।
এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, ওই দিন বাসে রূপাসহ ছয় থেকে সাতজন যাত্রী ছিলেন। অন্য যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ মোড় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যান। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় রূপা একাই বাসে ছিলেন। বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের সহকারী শামীম জোর করে রূপাকে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়।
এ সময় রূপা তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মুঠোফোন শামীমকে দিয়ে দেন এবং ক্ষতি না করতে অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করেন।
রূপা চিৎকার শুরু করলে ধর্ষকেরা তার মুখ চেপে ধরেন। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে রূপাকে হত্যা করা হয়। পরে মধুপুর উপজেলা সদর পেরিয়ে বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল এলাকার রাস্তার পাশে মরদেহটি ফেলে দেয়া হয়।
আরিফ উর রহমান টগর/এএম/এমএস